গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা স্থানীয় একটি কারখানার ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক মহড়া দিয়েছেন। এসময় লাঠিসোটা, রড, ধারালো ছোড়াসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে দেড় শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যের মহড়া চলাকালে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিশোর গ্যাং সদস্যরা কারখানার শ্রমিক ও পথচারীদের ধাওয়া দিয়ে পিছু নিলে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দোকানপাট ও বাসাবাড়ির গেট বন্ধ করে দেন।
এসময় কিশোরগ্যাং সদস্যরা একটি কারখানার গেট ভেঙ্গে লুটপাটও চালায়। নগরীর বসুরা এলাকায় সুছেং টেক্সটাইল কারখানার সামনে ১৭ মার্চ রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এ তান্ডব চলে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়।
স্থানীয়রা জানান, সুছেং টেক্সটাইল কারখানার জমির মালিকপক্ষের লোকজন কারখানাটির নিয়মিত ওয়েস্টেজ মালামাল (ঝুট) নিতেন। গত সিটি নির্বাচনের পর স্থানীয় ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম রফিক কারখানার ঝুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। জমির মালিকপক্ষের লোকজন রোববার সকালে ট্রাক নিয়ে ঝুট আনতে গেলে রফিক কাউন্সিলর ও তার সহোদর যুবলীগ নেতা মাসুদ রানার নেতৃত্বে দেড় শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য কারখানার সামনে জড়ো হয়।
এসময় তারা কারখানায় ট্রাক ঢুকতে বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে রফিক কাউন্সিলর ক্ষুদ্ব হয়ে কিশোর গ্যাং সদস্যদের ডেকে এনে এলাকায় আরো শক্তি বৃদ্ধির জানান দেয়। এসময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে তারা কারখানার গেটে শ্রমিক ও স্থানীয় যাকে পেয়েছে তার ওপরই চড়াও হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা এ তান্ডবের ছবি ধারণ করার সময় তাদের হাত থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। কাউন্সিলর রফিক এসময় সাংবাদিকদের প্রতিও তেড়ে আসেন। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পথ আগলে দাঁড়ালে কাউন্সিলর রফিক পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই দলবল নিয়ে সামনে এগিয়ে যান।
এদিকে এ বিষয়ে কাউন্সিলর রফিকের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আর চৌত্রিশের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম পঞ্চাশ পার্সেন্ট, আর জায়গার মালিকপক্ষ পঞ্চাশ পার্সেন্ট এভাবে ঝুট নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু মালিকের অন্য শরিকরা এটা মানতে নারাজ। তাই দুই একটা মই দিতে আইছিলাম। এখন সব চইলা গেছে, এলাকায় একটাও এখন নাই। মাঝে মধ্যে মই (মার) দিতে হয়, মই না দিলে কেউ মোডা (বড়) মনে করে না।’
এ বিষয়ে কারখানার জমির মালিকপক্ষের শরিক শাফিউদ্দিন শাফি বলেন, চায়নারা আমাদের জায়গা ভাড়া নিয়ে কারখানা করেছে। আমাদের বংশের অনেক যুবক বেকার। যেহেতু আমাদের জায়গায় কারখানা তাই এখানে ব্যবসা করা আমাদের অধিকার। অন্যান্য এলাকায়ও জমির মালিকদেরকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তাছাড়া কারখানার মালিকপক্ষও আমাদেরকে ঝুট দিতে ইচ্ছুক। কোনো প্রভাবশালী এসে কারখানায় জামেলা করুক এটা কারখানা কর্তৃপক্ষের অপছন্দ। কাউন্সিলর রফিক ও তার ভাইয়েরা এলাকায় রীতিমত ত্রাশের সৃষ্টি করে একের পর এক কারখানা দখল করে নিচ্ছে। তাদের এই অন্যায় মেনে নেয়া যায় না। এরা এলাকার কিশোর গ্যাং ও মাদক কারবারিদের নিয়ন্ত্রণ করে।
এ ব্যাপারে গাছা থানার ওসি মো. শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available