মোহাম্মদ শফিক, জেলা প্রতিনিধি (কক্সবাজার) : কক্সবাজার শহরের প্রাণ হিসেবে পরিচিত বাঁকখালী নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ স্মরণকালের সেরা অভিযান পরিচালনা করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নদীর কস্তুরাঘাটস্থ মোহনা থেকে এ অভিযান শুরু হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে চলমান এ অভিযানে অভিযানে পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ, জেলা পুলিশ, র্যাব-১৫-সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন।
জানা যায়, কক্সবাজারের শহরের প্রাণ প্রবাহ হিসেবে পরিচিত বাঁকখালী নদীর দখলের মহোৎসব চল ছিলো ৫ বছর ধরে। নদীর তীরে এ পর্যন্ত ৬শ’ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে একে একে চলছে স্থাপনা নির্মাণের কাজ। ২ মাসের ব্যবধানে নদীর তীরের শতশত হেক্টর জমি দখলের পর চলছে স্থাপনা নির্মাণ। খুরুশকুলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কস্তুরাঘাট পয়েন্টে বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে একটি সেতু। এই সেতুর পাশাপাশি সংযোগ সড়ক তৈরি হওয়ায় সড়কের দুই পাশে প্যারাবন ধ্বংস করে বড়ো বড়ো দালানকোঠা নির্মাণ করেছে প্রভাবশালী চক্র। তবে দীর্ঘ দিন ধরে এই নদী রক্ষায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন আইনি প্রক্রিয়া শেষে অবশেষে আজ উচ্ছেদে নেমেছে।
যদিও এখানে একটি নদীবন্দর করার জন্য সরকারের প্রজ্ঞাপন রয়েছে। এর জন্য এ জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য হাইকোর্টের রায় রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ আবু সুফিয়ান জানান, প্রায় ৩শ ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন অবৈধ স্হাপনা ও প্রায় ৬ একর সরকারি জমি উচ্ছেদে নেমেছে তাঁরা। আজ সকালে শুরু হওয়া এ অভিযান সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলবে।
কোনোভাবেই নদী দখলের প্রশ্নে ছাড় দেওয়া হবে না। নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।
ভুক্তভোগী আশিকসহ অনেকেই বন্দোবস্তি ও কবলামূলে খতিয়ানি জমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার কক্সবাজার সভাপতি সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, বেলার পক্ষ থেকে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন করছে প্রশাসন। এতে প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান তিনি। তবে প্রশাসন এর অভিযানকে বিভ্রান্ত করার জন্য দখলদাররা নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক এবং নিন্দনীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারে সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক এইচ এম নজরুল বলেন, কক্সবাজারের প্রাণ প্রবাহ বাঁকখালী নদী বহমান ও যে জলাধারা এবং প্যারাবন ছিলো আবারও যেন সেটা ফিরিয়ে পায়। পাশাপাশি সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করে সেখানেই সবুজ বেষ্টনী তৈরী করা হউক।
কক্সবাজারের পরিবেশ কর্মী আহসান সুমন বলেন, উচ্ছেদ হওয়ার পরপরই আবারও কিন্তু দখল হয়ে যায়। এটা যেন না হয়। তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান। পাশাপাশি উচ্ছেদ অভিযান পরবর্তী নদীর জায়গা নদী ফিরে পায় সে প্রত্যাশা করেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available