নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন গ্রামের মানষিক ভারসাম্যহীন যতিন্দ্রনাথ (৭০)। ২০০৬ সালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেনি। পরিবারের সদস্যরা তাকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও পায়নি। এক সময় তার আশা ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার ১৭ বছর পর তাকে ফিরে পেয়েছে আবেগে আল্পুত হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সহযোগীতায় বাবাকে ফিরে পেলেন ধামইরহাট উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মেয়ে সাবিনা এক্কা।
২৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাত ৯টায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ১৬৪ (বিএসএফ) আওতাধীন ডাংগী বিএসএফ ক্যাম্প পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) সীমান্ত পিলার ২৬০/৭-এস-এর নিকট হস্তান্তর করেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা যায়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবিনা এক্কা’র বাবা যতিন্দ্রনাথ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ১৭ বছর পূর্বে নিজ বাড়ি থেকে হারিয়ে যায়। গত ২১ ফেব্রুয়ারি সাবিনা লোক মারফত জানতে পারেন তার বাবা ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট থানার রায়নগর গ্রামের মন্দিরে অবস্থান করছে। এরপর পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ হামিদ উদ্দিন এর কাছে বাবাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে সহযোগিতা কামনা করেন।
পত্নীতলা ব্যাটালিয়নের (১৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ হামিদ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি জানার পর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ১৬৪ (বিএসএফ) আওতাধীন ডাংগী বিএসএফ ক্যাম্পকে অবগত করা হয়। তারাও মানষিক ভারসাম্যহীন যতিন্দ্রনাথকে ফিরিয়ে দিতে আশ্বস্থ করেন। পরে সোমবার রাত ৯টায় সীমান্ত পিলার ২৬০/৭-এস এর নিকট বিএসএফ সদস্যরা তাকে হস্তান্তর করেন। এরপর যতিন্দ্রনাথকে তার পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
যতিন্দ্রনাথের মেয়ে সাবিনা এক্কা বলেন, তারা দুই ভাই ও দুই বোন। বড় বোন মিন্না এক্কা। ২০০১ সালে সে দশম শ্রেণিতে পড়তো। হঠাৎ করেই বড় বোন অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। বোন মারা যাওয়ার পরিবারের সবাই ভেঙে পড়ি। বাবা ও মা খিরতি রানী শারীরিক ও মানষিকভাবে ভেঙে পড়ে। বাবা অনেক সময় উল্টোপাল্টা ও অসংলগ্ন কথা বলতে থাকে। ২০০৬ সালের একদিন কাউকে কিছু না বলেই প্যান্ট-শার্ট পড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেনি।
সাবিনা বলেন, আমার স্বামী নারায়ণ চন্দ্র তার চিকিৎসার জন্য ৪-৬ মাস পর পর ভারতে যায়। চিকিৎসা শেষে যতটুকু সময় পাই বিভিন্ন এলাকা ও মন্দিরে খোঁজ খবর নেয় এবং মানুষদের ছবি দেখায়। এক সময় বাবার ছবি দেখে স্থানীয়দের একজন চিনতে পারে। পরে বালুরঘাট রায়নগর কালিমন্দিরের বারান্দায় বাবার সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে খড়ের মধ্যে শুয়ে ছিল। পরে স্বামী ভিডিও কলের মাধ্যমে বাবাকে দেখায় এবং নিশ্চিত হতে পারি। পরে বিজিবিকে বিষয়টি অবগত করা হলে তারা বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
দীর্ঘ বছর পর বাবাকে এভাবে ফিরে পাবো, তা কখনোই ভাবিনি। বিজিবি ও বিএসএফ এর সহযোগীতায় বাবাকে ফিরে পেয়েছি। বাবাকে কাছে পেলাম তখন আবেগে আল্পুত হয়ে পড়ি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available