গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: শষ্য ক্ষেতে সেচ বন্ধ করায় পানির অভাবে ফেটে চৌচির বোরো ক্ষেত। অপরিপক্ক ভুট্টা-রসুনেও সেচ সুবিধা বন্ধ করে ফসল বিনষ্ট করা হচ্ছিল। উদ্দেশ্য ছিল নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কুমারখালী উত্তরপাড়া কাঁচা সড়কের কোল ঘেঁষে অন্তত ২০ বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা।
একারণে শষ্য ক্ষেতে সপ্তাহ খানেক ধরে সেচ সুবিধা বন্ধ করে রেখে ছিলেন প্রভাবশালীরা। তবে স্থানীয় কয়েক’শ কৃষকের প্রতিবাদের মুখে তিন ফসলি এসব জমিতে পুকুর খননের প্রস্তুতি ভণ্ডুল করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. সালমা আক্তার।
২২ মার্চ শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে তিনি সরেজমিনে ফসলের ক্ষেত্রে গিয়ে বোরো ধান, ভুট্টা, ধনিয়া এবং রসুনের জমিতে সেচ স্বচল করেন। তাৎক্ষণিক পাশের বরেন্দ্রের স্কীম থেকে ফেটে চৌচির হওয়া বোরো ক্ষেতে পানি দেওয়া হয়। এতে প্রাণ ফিরে পায় ধান গাছগুলো।
এর আগে পুকুর খনন না করার দাবিতে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ফসলি জমির ভেতর দাঁড়িয়ে মানববন্ধনের মাধ্যমে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন স্থানীয় কয়েক’শ কৃষক।
কৃষকেরা জানান, গুরুদাসপুরের বিয়াঘাট ইউনিয়নের কুমারখালী উত্তরপাড়া বিলের জমিতে বছরজুড়েই ফসল উৎপন্ন হয়। ক্ষেতে নির্বিঘ্নে সেচ সুবিধা দিতে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে পানির লাইন নির্মাণ করছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। অথচ একই গ্রামের মৃত সদর উদ্দিন মন্ডলের দুই প্রভাবশালী ছেলে আব্দুল হাকিম ও আব্দুল মমিন নিজেদের দশ বিঘাসহ পাশের আরো দশ বিঘা জমিতে পুকুর খননের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ কারণে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বোরো ধান, রসুন এবং ভুট্টা ক্ষেতে সেচ বন্ধ ছিল। ফলে ধান গাছগুলো লালচে হয়ে উঠে ছিল। পরে নির্বাবহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে পানি পেয়ে ধাণগাছগুলো আবারো প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
কুমারখালী মাঠে জমি থাকা জমসেদ আলী, মুঞ্জুর আলম, সোলায়মান আলী, শাজাহান আলী, আব্দুল কাদেরসহ অন্তত ২০ জন কৃষক বলেন, কুমারখালী উত্তরপাড়া বিলে অন্তত ২ হাজার বিঘা ফসলি জমি রয়েছে। সেসব জমিতে ধান, পাট, ভুট্টা, রসুন, ধনিয়াসহ সব ধরণের শষ্য চাষাবাদ করা হয়। প্রভাবশালীরা বিলের মুখে ২০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করলে আশেপাশের অন্তত ৫০ বিঘা জমিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়বে কৃষক। জলাবদ্ধতার পাশাপাশি কৃষকদের মাঠে চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সার-বীজ বা চাষের জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হবে কৃষকদের। তাই তারা তিন ফসলি এসব জমিতে পুকুর খনন চান না।
পুকুর খননের প্রস্তুতি নেওয়া আব্দুল হাকিম ও আব্দুল মমিন জানান, নিজেদের লীজ দেওয়া দশ বিঘা জমিসহ পাশের আরো দশ বিঘা জমিতে তারা পুকুর খননের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। একারণে ফসলের ক্ষেতে সেচ কাজ বন্ধ করা হয়েছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার জানান, কুমারখালী বিলের বোরো ক্ষেতে সেচ কাজ বন্ধ করে দিয়ে ছিলেন স্থানীয় পুকুর খনন চক্রের লোকজন। খবর পেয়ে তিনি মাঠে গিয়ে ক্ষেতে সেচ সুবিধা চালু করে দিয়েছেন। একই সাথে তিন ফসলি এসব জমিতে পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষকদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। তবে পুকুর খননের প্রস্তুতি নেওয়া ব্যক্তিদের না পাওয়ায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available