খুলনা ব্যুরো: নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে খুলনায় গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে ২৫ মার্চ সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, গণহত্যার বিষয়টি অনুধাবনের অংশ। পাকিস্তানি ঘাতকরা কেবল বাংলাদেশের নিরীহ সাধারণ মানুষদেরই হত্যা করেনি, তারা একাত্তরের পুরো মুক্তিযুদ্ধকালে আমাদের দেশের জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। ঐ মহান বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে থাকলে আমাদের পথ দেখাতে পারতেন। মহান বুদ্ধিজীবীদের হারানোর ফলে জ্ঞানের শূণ্যতা আজও পূরণ হয়নি। তবে সেই শূণ্যতা হতে জাতিকে বের করে আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জাতি হিসেবে বাঙালিদের কোন রাষ্ট্র ছিলো না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র দিয়েছেন। এখন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে আমাদের মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে হবে। এর মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপত্বিত করেন খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশনস) মোঃ হাসানুজ্জামান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবির ও সাবেক জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার মাহাবুবার রহমান।
সভায় বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে খুলনা শিল্পকলা একডেমি প্রাঙ্গণে আঞ্চলিক তথ্য অফিস (পিআইডির) উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দুর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। স্কুল-কলেজ-মাদরাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি/বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কন্ঠে ২৫ মার্চ গণহত্যার স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষ্যে বাদ জোহর ২৫ মার্চের রাতে নিহতদের স্মরণে সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া অনুষ্ঠান এবং মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
এদিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় শোকাবহ পরিবেশে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা দিবস পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী অদম্য বাংলার সম্মুখে আলোকচিত্র প্রদর্শনী করা হয়। দুপুরে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোকচিত্রগুলো ঘুরে দেখেন। এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে দখলদার হানাদার বাহিনী নির্বিচারে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অপারেশন সার্চলাইট নামে নিরীহ মানুষের ওপর নারকীয় হতাকাণ্ড চালায়, যা ইতিহাসে ঘৃণিত। এক রাতে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়, বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এই নৃশংস গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং অপরাধীদের আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে বিচার এখন সময়ের দাবি।
তিনি আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মহান মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত। গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মো. শরীফ হাসান লিমন, প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মনিরুজ্জামান, জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মঈনুল হোসেন, উপাচার্যের সচিব সঞ্জয় সাহাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ১০টায় আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available