পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীতে হঠাৎ করে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। চলতি সপ্তাহে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী ৫২৩ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। তবে দিন যত যাচ্ছে গরমের সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত এক সপ্তাহে ৫২৩ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়।
এদিকে ডায়রিয়ার কারণে রোগীর চাপে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। হাসপাতালের মেঝে থেকে শুরু করে হাঁটার পথ, বারান্দা সবখানেই অস্থায়ী বিছানা পেতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে মশা-মাছি এবং নোংরা পরিবেশের কারণে ভোগান্তিতে আছেন আগত রোগী এবং তাদের স্বজনরা।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী এলাকার রোগী শিশু সাবিহার মা বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই পাতলা পায়খানা ও বমি শুরু হয়, এর কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে। পরে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে স্যালাইন দেয়া হয়। সেই থেকে স্যালাইন চলছে। এখন শরীর কিছুটা ভালো। তবে হাসপাতালে কোনো বেড পাইনি, তাই বারান্দায় ফোম বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি।
একই কথা জানান হাজি খালি থেকে আসা রোগী চাঁদনী দেবনাথ সাথে ছিল মা সুস্মিতা দেবনাথ। তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি করেছি কিন্তু কোনো সিট খালি নেই তাই রাস্তার পাশে ছিট বসিয়ে স্যালাইন দিতেছি। স্যালাইন-ওষুধ হাসপাতাল থেকেই দিছে। তবে মশা-মাছির কারণে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। চার দিকে গন্ধ আর প্রচণ্ড গরম, ভোগান্তির যেন শেষ নাই।
পটুয়াখালী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত সাত দিনে জেলায় ৫২৩ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন উপজেলায় ভর্তি হয়েছেন। ইতোমধ্যে ৩৫৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় বাউফল উপজেলায় ৬ জন, দশমিনা উপজেলায় ১১ জন, দুমকি উপজেলায় ৭ জন, মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ৯ জন, কলাপাড়া উপজেলায় ১১ জন, গলাচিপা উপজেলায় ১৬ জন এবং পটুয়াখালী সদরে ৫৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়া গত ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৭৩৩ জন রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিলেও কোনো রোগী ডায়রিয়ার কারণে মারা যায়নি।
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন এস এম কবির হাসান বলেন, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিগত বছরগুলোতেও এমন ভাবে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। এসব বিষয় মাথায় রেখে ডায়রিয়ার চিকিৎসার জন্য আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি রয়েছে। তবে সকলের খাবার গ্রহণ এবং পানি পানের ক্ষেত্রে এই সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পরিস্তিতি এখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। খাবার স্যালাইনসহ অনান্য ওষুধেরও পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।
অপরদিকে ডায়রিয়ার পাশাপাশি জেলায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে ১৬২ জন নিউমোনিয়ায় আক্রন্ত হয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন। তবে ডায়রিয়া কিংবা নিউমোনিয়ায় এ বছর জেলায় কোনো রোগী এ পর্যন্ত মারা যায়নি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available