চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামে তিন দিন আগে তালাবদ্ধ বাসা থেকে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধারের পর তার মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করেছে বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে ওই যুবকের এক বন্ধুকে।
জুনায়েদ হোসেন জিসান (২১) নামে ওই যুবককে তার বন্ধু মেশকাত পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে গলাটিপে হত্যা করেছে। এরপর ওই বন্ধু নিহতের মাকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। গ্রেফতারের পর সে দাবি করেছে, নিহত জুনায়েদের সম্মতিতে তার মায়ের কাছ থেকে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একাই টাকা আত্মসাতের লোভে পড়ে বন্ধুকে হত্যা করে সে।
৫ এপ্রিল শুক্রবার রাতে নগরীর কোতোয়ালি থানার ডিসি হিল এলাকা থেকে মেশকাতুর রহমান মেশকাত (২০) নামে ওই যুবককে গ্রেফতারের পর সে তার স্বীকারোক্তিতে এসব কথা পুলিশকে জানায়। তার বাড়ি আনোয়ারা উপজেলায়।
এর আগে, ৩ এপ্রিল বুধবার রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার হাজিরপুল এলাকায় একটি ভবনের চতুর্থ তলার একটি ঘরের বাথরুম থেকে তিন দিন ধরে নিখোঁজ জুনায়েদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বাসা থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ায় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইন নম্বরে কল পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
নিহত জুনায়েদ মীরসরাই উপজেলার ওসমানপুর গ্রামের প্রবাসী আবু জাফরের ছেলে। তিনি পটিয়া মাদরাসার হিফজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী।
পুলিশ জানায়, জুনায়েদ ও মেশকাতের বাসা কাছাকাছি ভবনে। মেশকাত ও করিম যে বাসা থেকে মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, সেখানে ভাড়া থাকতো। তবে রমজান শুরুর পর করিম বাড়ি চলে গেলে মেশকাত একাই সেখানে থাকতো। তিনজনই মাদরাসার সাবেক ছাত্র এবং কোরআনে হাফেজ। জুনায়েদ প্রায়ই ওই বাসায় গিয়ে মেশকাতের সঙ্গে আড্ডা দিত।
বায়েজিদ বোস্তামি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সনজয় কুমার সিনহা এশিয়ান টিভিকে বলেন, ‘জুনায়েদের বাবা জমি কেনার জন্য কিছু টাকা পাঠিয়েছিল। সেটা বন্ধু মেশকাতের সঙ্গে সে আলোচনা করেছিল। এর মধ্যে একটি ঘটনা ঘটে। জুনায়েদ স্থানীয় মসজিদে তারাবির নামাজ পড়িয়ে ছয় হাজার টাকা আয় করে। তার মা সেই টাকা চাইলে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। অভিমান করে ১ এপ্রিল জুনায়েদ বাসা থেকে বেরিয়ে মেশকাতের কাছে চলে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেশকাতের ভাষ্যমতে, জুনায়েদ ও সে মিলে অপহরণের নাটক সাজিয়ে মায়ের কাছ থেকে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল। এর মধ্যে জুনায়েদ মায়ের ওপর অভিমান করলে বিষয়টি লুফে নেয় মেশকাত। এক পর্যায়ে জুনায়েদকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করে মেশকাত। অজ্ঞান করার পর সে ভাবে, যেহেতু ঘটনা একটা ঘটিয়ে ফেলেছে, এখন জুনায়েদকে বাঁচিয়ে রাখলেই সে ফেঁসে যাবে। তখন সে জুনায়েদকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।’
ওসি সঞ্জয় জানান, ১ এপ্রিল জুনায়েদ বাসাটিতে যাওয়ার পর মেশকাত তাকে ঘুমের ওষুধ মেশানো শরবত খেতে দিয়েছিল। সেটি খাবার পর জুনায়েদ দুর্বল হয়ে গেলে তাকে বাথরুমের ভেতর ঢুকিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরে শ্বাসরোধ করে তাকে খুন করে রাত ৯টার দিকে বের হয়ে যায় মেশকাত। পরবর্তী সময়ে আবার এসে গলা চেপে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। পরে তার মোবাইল নিয়ে ঘরে তালা দিয়ে চলে যায় খুনী।
এরপর মেশকাত নিহত জুনায়েদের নম্বর থেকে তার মাকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। কল রেকর্ডটি তার এক বন্ধুকে শোনালে তিনি সেটি মেশকাতের বলে শনাক্ত করেন। মেশকাত জুনায়েদের মোবাইলটি আনোয়ারায় নিয়ে বিক্রি করে দেয়। সেই মোবাইলের সূত্র ধরে মেশকাতের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available