রামু ( কক্সবাজার ) প্রতিনিধি: কক্সবাজারের রামুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের মোট মূল্যের প্রতি লাখে গ্রহীতাকে দিতে হয় দেড় হাজার টাকা। এছাড়া অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব এ্যাটর্নিতে পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ টাকা ক্ষেত্রবিশেষে অধিক টাকা ঘুষ দিতে হয়। সাব-রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান তার চাহিদা মোতাবেক অর্থ না পেলে রেজিস্ট্রি সম্পাদন করেন না। এক কথায় অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে রামু সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করা যায় না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আর এসমস্ত ঘুষ আদায় থেকে শুরু করে যাবতীয় দেন দরবার করেন অফিস সহায়ক বাবলা পাল।
জানা যায়, রেজিস্ট্রি দলিলে সরকারিভাবে প্রতি লাখে পে-অর্ডার করতে হয় সাড়ে ৬% কিন্তু দলিল গ্রহীতার কাছ থেকে ৯ থেকে ১০% হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে। অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব এ্যাটর্নিতে পে-অর্ডার করতে হয় মাত্র দেড় থেকে দুই হাজার। অথচ গ্রহীতার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে লাখ টাকা বা তার অধিক। এছাড়া কমিশনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করতে ৪০-৫০হাজার টাকা নিয়ে থাকেন।
এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্র আরএস পর্চার সাথে নামের একটা অক্ষর ভুল থাকলেও অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। নাহলে সাব-রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান দলিল রেজিস্ট্রি করেন না।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহায়ক বাবলা পালের যোগসাজশে মোটা অঙ্কের ঘুষের মাধ্যমে চলছে দলিল সম্পাদনের কাজ। তার ইশারা ছাড়া এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে ফাইল আদান প্রদানও হয় না বলে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে।
জমি রেজিস্ট্রি বাবদ সাব-রেজিস্ট্রারের বেধে দেয়া নির্ধারিত অংকের টাকা না পেলে দলিলে স্বাক্ষর করেন না তিনি। সচেতন মহলের কেউ অতিরিক্ত টাকা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে ডকুমেন্টপত্রে ভুল-ত্রুটিসহ নানা অজুহাতে দলিল প্রত্যাখ্যান করেন, তাই উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দলিল সম্প্রদান করতে হয় ভুক্তভোগীদের।
জোয়ারিয়ানালা এলাকার ভুক্তভোগী দিদারুল আলম অভিযোগ করে বলেন, সরকারিভাবে সাড়ে ৬% পে-অর্ডার জমা করে দলিল সম্পাদনের বিধান থাকলেও অফিসের চাহিদার কথা বলে অফিস সহায়ক বাবলা পাল তার কাছ থেকে দলিল মূল্যের লাখ প্রতি দেড় হাজার করে অর্থ আদায় করেছে। লম্বরী পাড়া এলাকার আবুল কাসেমও একই অভিযোগ করেছেন।
মোঃ শহিদ নামে আরেক ভূক্তভোগী জানান, কমিশনের মাধ্যমে তেচ্চিপুল এলাকায় একটি দলিল সম্পাদন করতে তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন রামু সাব-রেজিস্ট্রার অফিস। সাব-রেজিস্ট্রার স্ব-শরীরে না গিয়ে মুহুরী পাঠিয়ে উক্ত দলিল সম্পাদনের কাজ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ভূক্তভোগীর।
সাব রেজিস্ট্রার ও অফিস সহায়কের এসব কর্মকাণ্ডে দলিল লেখক থেকে শুরু করে দলিল দাতা ও গ্রহীতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। ফলে সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছেন।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দলিল লেখক বলেন, দলিল মূল্যে লাখ প্রতি ৯ -১০% আদায়কৃত অর্থে সাড়ে ৬% সরকারি পে-অর্ডার, দেড়% সাব-রেজিস্ট্রারকে দিতে হয়।
সচেতন মহলের দাবি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম ও দূর্নীতি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। টাকার নেশায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন রামু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তারা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রামুর সাধারণ মানুষ।
এদিকে দলিল রেজিস্ট্রিকারি ভূমি মালিকরা দুপুর ৩টার মধ্যে না আসলে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত ফি নিয়ে থাকেন। শুধু কি তাই, বাড়তি টাকা আয় হলে কাজের নির্ধারিত সময় গড়িয়ে রাত সাতটা থেকে আটটা নাগাদ অফিস করেন বলে জানা যায়।
জানতে চাইলে রামু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহায়ক বাবলা পাল সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে রামু সাব-রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করেই দলিল সম্পাদন করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার জেলা রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available