নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বারইপাড়ায় নবগঙ্গা নদীর ওপর ৭ বছর ধরে চলছে সেতু নির্মাণ কাজ। নকসার ত্রুটি, ঠিকাদারের গাফিলতি, কাজে ফাকি, সঠিক তদারকির অভাব, কর্তৃপক্ষের অদৃশ্য খবরদারিসহ নানাবিধ জটিলতায় কাজটি শেষ হচ্ছে না। থেমে থেমে ৭ বছর ধরে চলছে এ সেতু নির্মাণের কাজ।
২০১৭ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে। আড়াই বছরে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। বারবার মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজ শেষ করতে পারেনি। নকশায় ত্রুটি থাকায় নির্মাণ কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে সেতুতে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, সেতু নির্মাণের বাকি কাজ ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হবে। কয়েক দফায় সময় ও অর্থ বেড়ে এখন ব্যয় ১২৫ কোটি ৯২ লাখ ৩১৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল জেলা শহর থেকে কালিয়া উপজেলা শহর ও ৮ টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভাকে পৃথক করে রেখেছে নবগঙ্গা নদী। ফলে কালিয়া উপজেলাবাসীকে যোগাযোগে ব্যপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। সেই ভোগান্তি কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ঘোষণা অনুযায়ী উপজেলার বারইপাড়া খেয়াঘাটে ২০১৭ সালে একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
নড়াইল-কালিয়া সড়কের ২১ কিলোমিটারে নবগঙ্গা নদীর ওপর ৬৫১.৮৩ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০.২৫ মিটার প্রস্থের বারইপাড়া সেতু নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৫ কোটি টাকা। সেতু নির্মাণের কাজ পেয়েছিলেন যশোরের ঠিকাদার মঈনুদ্দীন বাসী ও জামিল ইকবাল। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তখন নির্দিষ্ট সময় শেষে কাজের অগ্রগতি ছিল মাত্র ২৩ শতাংশ। পরবর্তীতে আরও তিন বার সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে কাজ শেষ করতে পারেনি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শেষ সময়ে অর্থাৎ ৪র্থ বার মেয়াদ বৃদ্ধির সময় ধরা পড়ে নকশার জটিলতা। সেতুর ছাদের কিছু অংশ নির্মাণ কাজ শেষে দেখা যায় সেতুর নিচ দিয়ে নৌ-যান চলাচল করতে পারছে না।
পরে নকশার পরিবর্তন করে উচু করে সেতু নির্মাণের জন্য নতুন নকশা অনুমোদন দেয়া হয়। এতে ব্যয় বাড়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। কয়েক দফায় সময় ও অর্থ বেড়ে এখন ব্যয় ১২৫ কোটি ৯২ লাখ ৩১৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সেতুটি নির্মাণ হলে নড়াইল জেলা শহরের সাথে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে কালিয়া উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। ফলে তাদের ভোগান্তি কমবে। অপরদিকে ব্যবসা বাণিজ্যসহ মানুষের জীবন যাত্রার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
বারইপাড়া ঘাট এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন দিলু বলেন, তিনি প্রায়ই নবগঙ্গা নদীর বারইপাড়ার খেয়া পার হয়ে উপজেলা শহর কালিয়া যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিন নানা জটিলতায় এ সেতুর কাজ শেষ হচ্ছে না। এ সেতুর ভুল নকশার সাথে জড়িতদের কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে। উন্নয়ন কাজ ব্যহত হচ্ছে। তাই তাদের বিরূদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।
এ ব্যাপারে নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কাজ চলমান রয়েছে। নকশা পরিবর্তনের কারণে আলাদা টেন্ডার করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সমস্ত কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
নড়াইল-১ আসনের সাংসদ বিএম কবিরুল হক মুক্তি বলেন, এ সেতুটি নড়াইল, গোপালগঞ্জ, খুলনাসহ কয়েকটি জেলার সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করবে। মানুষের সময় ও অর্থ বাঁচবে। বিশেষ করে কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা সৃষ্টি হবে। এসব কিছু মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিনের চেষ্টার ফলে এবং প্রধানমন্ত্রী’র প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এ সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সকল জটিলতা নিরসন করা হয়েছে। দ্রুত গতিতে সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে। কাজ শেষ হলেই জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available