কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার মিরপুরে পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একটি চায়ের দোকানে আওয়ামী লীগ নেতার গুলিতে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
১৩ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শিমুলিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করেন।
মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাহার আলী পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা আতাহার আলী এবং আইনাল নামের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা হাবিবুল্লাহ।
গুলিবিদ্ধ হওয়া ওই দুই ব্যক্তি হলেন, মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়ির শিমুলিয়া এলাকার হাসেম গাজী (৫৫) ও বহলবাড়ি সাতবাড়িয়া এলাকার রেজাউল ইসলাম (৬০)।
মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আতাহার আলীর সঙ্গে তার মামাতো ভাই হাশেম কাজির সঙ্গে জমাজমি নিয়ে বিরোধ ছিলো। গত জাতীয় নির্বাচনে এরা দুজন দুইপক্ষে কাজ করেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা আতাহার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল ইনুর পক্ষে কাজ করেছিলেন। এই আসনে জয়ী হন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র পার্থী মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন।
আহতদের স্বজন, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যার দিকে শিমুলিয়া গ্রামে স্থানীয় পল্টুর চায়ের দোকানে বসে কয়েকজন চা পান করছিলেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা আতাহারের পক্ষের ৩০–৪০ জন অস্ত্র নিয়ে পল্টুর চায়ের দোকানের সামনে যান। সেখানে চায়ের দোকানে থাকা হাসেম গাজীর সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। সেখানে অস্ত্র নিয়ে আতাহার ও তাঁর ভাতিজারা হাজির হন। এক পর্যায়ে আতাহার তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে পরপর পাঁচটি গুলি করেন। এতে সেখানে উপস্থিত লোকজন আতঙ্কিত হয়ে দৌড় দেন। এতে হাসেম ও ভ্যানচালক রেজাউল গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ দুজনকে দ্রুত উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়।
আহত হাসেম, রেজাউল ও তার স্বজনরা বলেন, পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রতিপক্ষের আতাহার আলী ও তার লোকজন এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। তারা হাসেম গাজীকে গুলি করে গুরুতর আহত করে। এসময় রেজাউল নামের এক ভ্যানচালকও গুলিবিদ্ধ হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আহতদের স্বজন ও পরিবার।
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, গুলিবিদ্ধ দুজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।
মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হালিম বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক, একটি মিটিংয়ে আছি পরে এ বিষয়ে কথা হবে।
এ বিষয়ে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা হাবিবুল্লাহ বলেন, দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছি। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম অ্যান্ড অবস পলাশ কান্তি নাথ বলেন, গত নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ ছিলো। আজ একটি মসজিদের টাকা তোলা নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হওয়ার এক পর্যায়ে আতাহার এবং তার লোক জন গুলি করে। এতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়। এই ঘটনায় আতাহার আলী এবং আইনাল নামের দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তার লাইসেন্সকৃত অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা যায়নি। এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available