কুমিল্লা প্রতিনিধি: শ্রদ্ধায় আর ভালোবাসায় জাতীয় পতাকার রূপকার শিব নারায়ণ দাসকে শেষ বিদায় জানিয়েছে কুমিল্লাবাসী।
২০ এপ্রিল শনিবার বিকাল ৪টায় নিজ জন্মস্থান কুমিল্লা টাউনহল প্রাঙ্গণে তার মরদেহ রাখা হয়। সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ও কুমিল্লার সর্বস্তরের মানুষ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘উনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আমার নেতা। এই জাতি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারিয়েছে। শিবুদার মাঝে রাজনীতি নিয়ে ক্লান্তি ছিল না। উনি আমাদের হাতে পোস্টার বানিয়ে দিতেন। আমরা পুরো শহর সেই পোস্টার বিলিয়ে দিতাম। এমন একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদকে কুমিল্লার মানুষ হারিয়েছে। যত দিন বাংলাদেশের ইতিহাস থাকবে, ততদিন এই জাতি উনাকে স্মরণ করবে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হাসান পাখি বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় শিবুদার সহযোগী ছিলাম। আমরা গর্বিত যে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা তাকে শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছি।’
সাহিত্যিক ও গবেষক ড. আলী হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘তিনি একজন সৎ ও মিশুক মানুষ ছিলেন। এমন মানুষ বিরল। আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে উনাকে বিদায় জানিয়েছি। এই জাতি উনাকে আজীবন স্মরণ রাখবে।’
আবৃত্তিজোট কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘শিব নারায়ণ দাসের নকশা করা পতাকা বাংলার আকাশে প্রথম উড়েছিল। সেই শিব নারায়ণ দাস কুমিল্লার সন্তান। এটা আমাদের কুমিল্লাবাসীর জন্য গৌরবের ও অহংকার। তার শেষ বিদায়ে আমরা যথাযোগ্য মর্যাদায় সহিত তাকে বিদায় জানিয়েছি।’
জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘উনি একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পতাকা শিব নারায়ণ দাসের হাতেই হয়েছে। উনি কখনো নিজের জন্য ভাবেননি। উনিই প্রথম কুমিল্লার টাউনহল মাঠে পাকিস্তানের পতাকা পুড়েছিলেন। আমরা সবার পক্ষ দাবি জানাই, শিব নারায়ণ দাসকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হোক।’
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শিব নারায়ণ দাসের সহধর্মিনী বীর মুক্তিযোদ্ধা গীতশ্রী চৌধুরী বলেন, ‘আমি ৫৫ বছর ধরে তার সঙ্গে ছিলাম। সেই যুদ্ধের সময়কাল থেকে। এই কুমিল্লা শিব নারায়ণ দাসের প্রাণের কুমিল্লা। শেষ সময় পর্যন্ত কুমিল্লাবাসী শিব নারায়ণ দাসের পাশে ছিলেন। আমরা কৃতজ্ঞ।’
শিব নারায়ণ দাসের ছেলে আদিত্য অর্নব বলেন, ‘আজকে আমার বাবাকে শ্রদ্ধা জানাতে যারা এখানে এসেছেন, সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমার বাবা সবসময় চাইতেন, দুঃখ ও দুর্দশামুক্ত হয়ে এই দেশ যাতে সামনে এগিয়ে যায়। আমার বাবা দেশের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকতেন। আমি আমার বাবার আদর্শ লালন করে বড় হতে চাই।’
বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার জাসদ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস ১৯ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৭৮ বছর।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available