সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া গ্রামে চার হাজার ফুট জায়গায় চল্লিশটি পিলারে দাঁড়িয়ে আছে ২০০ বছর পুড়নো ঐতিহাসিক ও দৃষ্টিনন্দন গফুর শাহ গায়েবি মসজিদ।
২০০ বছর পুড়নো এই মসজিদ প্রতিষ্ঠার পিছনে রয়েছে নানান গল্প। গ্রামে আবদুল গফুর শাহ নামে এক কৃষক ছিলেন। কৃষিকাজ ও গরু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। গফুর শাহ প্রতিদিন গরুগুলোকে নিয়ে যেতেন বাড়ির পাশে পাহাড়ে। প্রতিদিন সকালে পাহাড়ে গরু নিয়ে যেতেন সন্ধ্যায় আবার বাড়িতে নিয়ে আসতেন।
একদিন তার একটি গাভীর বাছুর ফিরে আসেনি। পাগলের মতো সেটি খুঁজতে শুরু করলেন গফুর শাহ, কিন্তু বাছুরটি পাওয়া যাচ্ছিল না। গফুর শাহ প্রতিদিনই বাছুরের সন্ধানে পাহাড়ে যেতেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর এভাবে হঠাৎ একদিন গভীর জঙ্গল থেকে ডেকে উঠল বাছুরটি। যেখান থেকে বাছুরটির আওয়াজ শোনা জাচ্ছিল সেখানে যাওয়া ছিল অনেক কঠিন। কিন্তু বাছুরের সন্ধানে জঙ্গল পরিষ্কার করতে শুরু করলেন গফুর শাহ। এভাবে দীর্ঘ সময়ের চেষ্টায় জঙ্গলের ভেতরে এক স্থানে গিয়ে বাছুরটির সন্ধান পেলেন। সেখানে বাছুরের সঙ্গে আরেকটি জায়গা দেখে বিস্মিত হলেন তিনি।
এদিকে বাছুর নিয়ে আবদুল গফুর যখনি বাড়িতে ফিরে আসার জন্য পা বাড়ান ঠিক তখনি জঙ্গলের গভীর থেকে ‘গফুর এখানে নামাজ আদায় কর’ বলে একটি গায়েবি আওয়াজ ভেসে আসে। থমকে দাঁড়ান আবদুল গফুর। এরপর সেই গায়েবি আদেশ অনুযায়ী সেই স্থানে নামাজ আদায় করে বাড়ি ফিরে যান তিনি। এ পাহাড় থেকে ওই সময় জনবসতি ছিল অনেক দূরে। কিন্তু আজানের শব্দ শোনা যেত প্রতিনিয়ত। ধীরে ধীরে এই গায়েবি আজানের কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসীরাও কৌতূহলী হয়ে সেখানে যেতে শুরু করেন।
গফুর শাহ গায়েবি জামে মসজিদের ইমাম বাকির উল্ল্যা বলেন, গফুর শাহ গায়েবি মসজিদে দূর-দূরান্ত থেকে মুসলমান ছাড়াও হিন্দু-বৌদ্ধসহ নানান ধর্মের মানুষ আসেন তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য। মানুষের বিশ্বাস, এখানে আসলে যেকোনো মনোবাসনা পূরণ হয়। এভাবে ছড়িয়ে পড়ে গফুর শাহ গায়েবি মসজিদের নাম। চারদিকে ব্যাপক নাম ছড়িয়ে পড়ার পর একদিন রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেলেন গফুর শাহ। অনেক খোঁজ করেও তার সন্ধান আর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
হযরত গফুর শাহ গায়েবি জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, এই মসজিদ সম্পর্কে অনেকে অনেক রকম কথা বলে থাকেন। হযরত গফুর শাহ মারা গেলে সেখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিষ্কার হয়ে গায়েবিভাবে একটি গম্বুজের মতো উঠেছিল, সেখানে পরবর্তীতে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।
গফুর শাহ গায়েবি জামে মসজিদের সহ-সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন বলেন, এটি গায়েবি মসজিদ। এখানে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। অনেকে মানত করে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলও দিয়ে যান মসজিদ কর্তৃপক্ষকে। তবে জুমার দিন হাজার হাজার মুসল্লির গমন ঘটে বলে জানান তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available