কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: ‘যারা আমার বিরোধিতা করবে, তারা আল্লাহর সঙ্গে বিরোধিতা করবে’ এমন মন্তব্য করেছেন কুষ্টিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান। খোকসা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আপন ছোট ভাইয়ের নির্বাচনী পথসভায় গিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
১ মে বুধবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের গোসাইডাঙ্গি গ্রামে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও আপন ছোট ভাই রহিম উদ্দিন খানের নির্বাচনী পথ সভায় গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শয়তানরাও মসজিদে আসবে, শয়তানরাও গোরস্থানে শোবে। শয়তানরা মসজিদে এসে সুখে থাকতে পারবে না। আর গোরস্থানে গেলে শয়তানদের যেভাবে মাটি চাপা হবে, আপনারা কল্পনাই করতে পারবেন না।
তার বক্তব্যের ২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন বক্তব্যর প্রেক্ষিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরাসহ সাধারণ ভোটাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, সদর উদ্দিন খান তার ভাইকে জেতানোর জন্য মরিয়া। তার পক্ষে তিনি নির্বাচনী সভা-সমাবেশ করছেন। এর আগে তার ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচন করার জন্য থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেনকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে সদর উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে। সে সময় দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে তিনজন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি নেতারা বিচ্ছিন্নভাবে পক্ষ নেয়ায় আওয়ামী লীগের এই তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা।
এছাড়াও এদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আখতার মোটরসাইকেল প্রতীকে লড়ছেন, সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর রহিম খান দোয়াত কলম প্রতীকে ও যুগ্ম সম্পাদক আল মাসুম মোর্শেদ ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান বাবুল আখতার মোটরসাইকেল প্রতীকে লড়ছেন, সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর রহিম খান দোয়াত কলম প্রতীকে ও যুগ্ম সম্পাদক আল মাসুম মোর্শেদ ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। রহিম উদ্দিন খান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খানের ভাই।
এদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে দাঁড় করিয়েছেন রহিম উদ্দিন খানের ছেলেকে। যদিও তিনি প্রার্থী হলেও বাবার পক্ষে মাঠে ভোট করছেন।
এছাড়াও আটজন ভাইস চেয়ারম্যান ও তিনজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিশাল বিশাল বহর নির্বাচনী মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত জেলা মহিলা দলের সিনিয়র সহ সভাপতি ইসরাত জাহান পুনম পুরোদমে প্রচারণায় রয়েছেন। তিনি অবশ্য টানা তিনবারের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত।
এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলী বলেন, কিছুক্ষণ আগে লোক মুখে কথাগুলো শুনলাম। যেহেতু কথাগুলো আমার সামনে বলিনি, তাই এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।
খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম বাবলু বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খানের এই ধরনের বক্তব্য সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে একটি অযৌক্তিক কথা। তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এনেছেন বলে আমি মনে করি। নির্বাচনের প্রচারণায় এই ধরনের কথা বলা ঠিক না। বর্তমানে তাদের লোকজন নির্বাচনী এলাকায় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খানের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহর ঘর মসজিদ, মাদরাসা, সেই সাথে গোরস্থান ও ঈদগাহ যারা মানতে চান না, যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মানতে চান না; তারা আমাকে মানবে কীভাবে? এই ধরনের লোক জামায়াত-শিবিরের সক্রিয় সদস্য। এরা অনেকেই আওয়ামী লীগের দলের মধ্যে ঘাপটে মেরে আছে। এদেরকে খুব শীঘ্রই চিহ্নিত করা হবে। ওই দিন মূলত এই ধরনের কথা বার্তায় বলা হয়েছিল, যা অনেকই রাজনৈতিকভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।
প্রসঙ্গত, খোকসা উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৩ জন। যার মধ্যে ৫৭ হাজার ৩২০ জন পুরুষ এবং ৫৬ হাজার ৬৩৩ জন নারী ভোটার রয়েছেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available