বাদশাহ ওসমানী, রংপুর ব্যুরো: বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রংপুর রেঞ্জের ঠাকুরগাঁও জেলা কমান্ড্যান্ট মিনহাজ আরেফিনের বিরুদ্ধে ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
নির্বাচন কমিশন অফিস সূত্রে জানা যায়, উপসচিব এম মাজহারুল ইসলাম (নির্বাচন পরিচালনা ১) স্বাক্ষরিত ৬৮৫নং স্মারকে ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পত্র নং ৪৪.০০.০০০০.০২৪.৯৯.০১৯.২০২৩-৩১৭ তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রি. উল্লিখিত পত্রে বাংলাদেশ আনসার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে কয়েকশত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও আনসার ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্টের iBAS++ সফটওয়্যারের ১২২০৫০৮১০৬৯৪৬ অফিস কোডে পেট্রোল, ওয়েল ও লুব্রিকেন্ট বাবদ ৭৫ হাজার টাকা, যানবাহন ব্যবহার (চুক্তি ভিত্তিক) ভাড়ার জন্য ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা, যাতায়াত ব্যয় পিসি এপিসি ১০ লাখ ৮০০ টাকা, অন্যান্য সরঞ্জামাদি ভাড়ার জন্য ২০ হাজার, আপ্যায়ন ব্যয়ের জন্য ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা, ব্যবস্থাপনার জন্য ৪৫ হাজার এবং মনিহারি বাবদ ২ লাখ ৮৫ হাজার ২০০ মিলে সর্বমোট ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৪ টাকা বরাদ্দ দেয় নির্বাচন কমিশন। উল্লিখিত বরাদ্দের টাকাগুলো ঠাকুরগাঁও জেলা কমান্ড্যান্ট সঠিকভাবে খরচ না করে ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঠাকুরগাঁও আনসার ভিডিপির অফিসের একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন পেট্রোল ওয়েল লুব্রিক্যান্ট ও যানবাহন ভাড়া এবং মনিহারি বরাদ্দের টাকাগুলো সঠিকভাবে খরচ করেনি জেলা অফিস।
এছাড়াও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে রংপুর রেঞ্জ পরিচালকের মাধ্যমে জেলা কমান্ড্যান্টকে ঠাকুরগাঁও জেলার ৫ উপজেলা, ১টি পৌরসভাসহ ৫৪টি ইউনিয়নে ৪১৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের আনা নেওয়ার জন্য যানবাহন খরচ বাবদ ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু জেলা কমান্ড্যান্ট উপজেলা অফিসারদের ঠিকমতো নির্বাচনকালীন ভোট কেন্দ্রের টাকাগুলো বিতরণ না করে বেশিরভাগ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপজেলা আনসার ভিডিপির কর্মকর্তারা জানান।
সূত্রটি আরো জানায়, দীর্ঘদিন ঠাকুরগাঁ আনসার ভিডিপির জেলা কার্যালয়ে হিসাবরক্ষণের পদটি খালি। অফিস সহকারী ও ব্যাটালিয়ন সদস্যদের সমন্বয়ে জেলা কমান্ড্যান্ট বিল ভাউচারের কাজগুলো করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে তারা ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার সহায়তা করেছেন বলে জেলা অফিসের সূত্রটি নিশ্চিত করেন। তবে অফিসে এক সহায়তাকারী ব্যাটালিয়ন সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, বড় স্যারেরা যেভাবেই কাজ করতে বলেন সেভাবেই আমাদেরকে কাজ করতে হয়, আমাদের কোনো প্রশ্ন করে লাভ নেই।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁ জেলা আনসার ভিডিপির সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট ফারুক হোসেন জানান, জেলা আনসার ভিডিপি ঠাকুরগাঁও জেলার নামে নির্বাচনকালীন কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে কথাটি সঠিক। তবে এগুলোর খরচের বিষয় জেলা কমান্ডেন্ট নিজেই করে থাকেন। আমাকে যে বিষয়গুলো জানানো হয় সেগুলো শুধু আমি জানি। তাছাড়া জেলা কমান্ডেন্ট-এর মাধ্যমে অফিসে এখনো নানান উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলছে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে জেলা কমান্ড্যান্ট মিনহাজ আরেফিন ক্যামেরা বা মোবাইল ফোনে রেকর্ড না করার শর্তে জানান, নির্বাচনকালীন নির্বাচন অফিসের পক্ষ থেকে আমাদের কি কি দেওয়া হয়েছে বা হয়নি এটা একান্ত আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়। বরাদ্দের টাকাগুলো আমরা কীভাবে খরচ করেছি বা করিনি সে বিষয়গুলো দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসসহ ট্রেজারি অফিস রয়েছেন। তারাই বিষয়গুলো জানেন এবং খতিয়ে দেখবেন। এখানে সাংবাদিকদের জানার বা শোনার বা নিউজ প্রকাশ করার কিছুই নেই। জানার থাকলে সাংবাদিকরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জেনে নিবে।
রংপুর জেলা কমান্ড্যান্ট কীভাবে বরাদ্দের সমুদয় টাকাগুলো খরচ না করে সরকারকে ফেরত দিচ্ছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি সদুত্তর না দিয়ে বলেন, আমার জেলায় যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেই বরাদ্দের চেয়েও বেশি খরচ হয়েছে। আমি আরো টাকা বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করেছি।
নির্বাচনকালীন আনসার ভিডিপিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সহায়তার জন্য যে বরাদ্দগুলো দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে রংপুর জেলা কমান্ড্যান্ট মেহেদী হাসান জানান, নির্বাচন কমিশন দক্ষতার সাথে অত্যন্ত নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ এবং শতভাগ সুষ্ঠু আবার নিরপেক্ষ নির্বাচন করেছে। শুধু আনসার ভিডিপি নয় সরকারের সকল স্তরের সকল বাহিনী নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করেছে। ওই সময় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রংপুর জেলাতেও ৭ কোটি ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩২ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। আমি বরাদ্দের টাকাগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত একটি টাকাও খরচ করিনি। এছাড়া রংপুর জেলার ৮ শত ৫৮টি ভোটকেন্দ্রে ৮ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা আমি প্রতি ইউনিয়নের দলনেতাদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিয়ে তার বিল ভাউচার ডকুমেন্টসহ রেখে দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সরকারি টাকাগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে বলে তিনি জানান। যারা সরকারি টাকাগুলো অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে বিল ভাউচার করেছেন তারা কাজটি ঠিক করেননি বলে তিনি মন্তব্য করেন।।
এ বিষয়ে আনসার ভিডিপির উপ-মহাপরিচালক (ডিডিজি) রংপুর রেঞ্জের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনকালীন আনসার ভিডিপির জন্য বরাদ্দগুলো অফিসের একান্ত বিষয়। এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্র সাংবাদিকদের কে দিয়েছেন। কোথায় পেলেন এসব পেপার্স। এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। তবে তিনি বলেন, রংপুর রেঞ্জের কোনো কোনো জেলা কমান্ড্যান্টদের বিরুদ্ধে কি কি অভিযোগ রয়েছে আপনারা লিখিতভাবে আমার স্টাফ অফিসার আসাদকে দিয়ে যান আমি পর্যায়ক্রমে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available