কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: বাংলা সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভূমিকা রেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ।
৮ মে বুধবার সকাল ১১টায় বিশ্বকবির ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কবির স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ি আঙিনায় ২ দিনব্যাপী রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী ও আলোচনা অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ ও তার সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বাঙালির চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিনিধি। বিশ্বকবির কুঠিবাড়ী, কাচারিবাড়িসহ তার সব স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টার অব্যাহত আছে।
কুষ্টিয়ার ঐতিহ্য আমাদের এই শিলাইদহের কুঠিবাড়ি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত এখানে রবীন্দ্রপ্রেমী ও দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। তাই এখানে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র করতে আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতা বাড়াতে হবে, যাতে করে পর্যটকদের কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হয়। একইসাথে এই শিলাইদহে ভবিষ্যতে শান্তি নিকেতনের আদলে কিছু করা যায় কিনা, সেটাও ভেবে দেখা হবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার এএইচ এম আবদুর রকিব, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিশির কুমার রায়, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, জাগ্রত মহানায়ক শিহাব রিফাত আলম, জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটির চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম তামিজি প্রমুখ।
কবির কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করেন রবীন্দ্র গবেষক ইবির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সরওয়ার মুর্শেদ রতন ও শিলাইদহ রবীন্দ্র সংসদের পরিচালক আফজাল হোসেন।
এর আগে জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের কণ্ঠে সূচনা সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। দুই দিনব্যাপী রবীন্দ্রমেলাকে ঘিরে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি আঙিনা হাজারো দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। তবে প্রচণ্ড গরম এবং উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের কারণে তিন দিনের এ অনুষ্ঠানকে দুই দিনেই শেষ করা হবে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন বিশ্বকবির ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানে কুঠিবাড়ির মূলমঞ্চে প্রতিদিনই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলার সংগঠনসহ জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা কুঠিবাড়ির মূলমঞ্চে রবীন্দ্র সংগীত, কবিতা আবৃত্তি, দলীয় নৃত্য পরিবেশন ও রবীন্দ্রনাথের লেখা নাটক মঞ্চস্থ করবেন।
এদিকে, রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীতে কুঠিবাড়ি চত্বরে বসেছে বিশাল গ্রামীণ মেলা। নানারকম পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ঐতিহাসিক এই উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
জমিদারি দেখাশোনার জন্য ১৮৯১ সালে প্রথম এই কুঠিবাড়িতে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নিরিবিলি পরিবেশ, জমিদারি আর ব্যবসার কারণে বার বার কুষ্টিয়ার এই কুঠিবাড়িতে ফিরে আসতেন তিনি। নিভৃত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কবির জীবনের বেশকিছু মূল্যবান সময় কেটেছে। এখানে বসে রচিত গীতাঞ্জলি কাব্যই রবীন্দ্রনাথকে এনে দিয়েছে নোবেল পুরস্কার আর বিশ্বকবির মর্যাদা। এছাড়া তিনি এখানে বসেই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতসহ অসংখ্য কালজয়ী সাহিত্য রচনা করেছেন। কুঠিবাড়িতে সংরক্ষিত আছে সেসব দিনের নানা স্মৃতি।
তবে কুমারখালী শিলাইদহের পার্শ্ববর্তী দুটি উপজেলাতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কারণে এবারের অনুষ্ঠানে লোক সমাগম কম হয়েছে। এতে রবীন্দ্রপ্রেমীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করেছে। আগামীতে তারা জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান উপভোগ করতে চায়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available