নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেছেন, অনেক জমির মালিক অনুপস্থিত। আমাদের দায়িত্ব সর্বোচ্চ প্রচারণা চালানো। তবে এটা মালিকের দায়িত্ব। তার জমি রক্ষা করার দায়িত্ব কিন্তু তার। আমরা এই প্রচারের জন্য পরিকল্পনা নিচ্ছি। টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারণা চালানো হবে। এরপরেও কেউ না জানলে এটা আমাদের দায়িত্ব থাকবে না।
১৫ মে বুধবার দুপুরে ডিজিটাল ভূমি জরিপ ও ভূমি ব্যাবস্থাপনা বিষয়ক সেমিনারে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, পাবলিককে (মানুষ) আরও সিনসিয়ার (দায়িত্বশীল) হতে হবে। তারা অধিকার বঞ্চিত হলে আমরা দেখবো। তবে কেউ গোপনে টাকা দিয়ে এসকল কাজ করাবেন না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রধানমন্ত্রী যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেটার জন্য আমরা স্মার্ট ভূমি ব্যাবস্থাপনা চাই। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করবো। এখানে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তবে আমরা একটা পরিবার হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব আমরা সুষ্ঠুভাবে পালন করবো। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় হবে না।
তিনি বলেন, আমি আমার ইউনিয়নে পরপর ছয়বার চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি আমার ইউনিয়নে লেকজনকে বুঝিয়ে সমস্যা কমিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু উনারা তো শালিস করতে পারবেন না৷ এটা নির্ভর করবে সেই ব্যক্তির রুচির ওপর। যদি ত্রুটির কথা বলেন, সব জায়গায়ই কিছুটা ত্রুটি রয়েছে। তবে কে কতটা এটাকে কলুষিত করবে তা নির্ভর করবে ভোক্তাদের আন্তরিকতার উপর। দালালিরা দালালি করুক। ভোক্তারা আন্তরিক হলে আপোষে এ কাজটি করা যাবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই একটি ফ্রেশ ভূমি ব্যাবস্থাপনা নিয়ে আসতে। আমরা চেষ্টা করছি। তবুও কিছুটা রয়েই যাবে। তবে এমন কেস অনেক কমে যাবে। পাশাপাশি আদালতে যারা যাবে তারাও চিন্তা করবে সমাধানের মাধ্যমে আমরাও এসে শামিল হই।
ভূমি মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) আনিস মাহমুদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক। সেমিনারে প্রেসেন্টেশন উপস্থাপন করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের জহুরুল হক ও এশিয়া এরিয়া সার্ভের প্রজেক্ট ম্যানেজার মি. কং। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়, জরিপ অধিদফতর, কোরিয়ান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ, জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরবৃন্দ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
এ সময় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ বলেন, একজন বললেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জমি দখল করে, ভূমি কর্মকর্তারা উদাসীন থাকে। এটা কী শুধু ভূমি কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য। জমির মালিক, জমির দখল ও রেকর্ড আপডেট রাখার কাজ কী আমরা করি। নারায়ণগঞ্জে অনেক মানুষ আছে যারা নিজের জমিতে যায় না। জমিতে বিনিয়োগ লাভজনক তাই অনেকে জমিতে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু জমিতে তারা যান না।
তিনি বলেন, জমির মালিকদের সচেতন হতে হবে। জরিপ রাতারাতি শেষ হয়ে যায় না। জরিপ শেষ হতে কমপক্ষে এক বছর লাগে। এ সময়েও কী তারা এটা জানবে না। আমাদের সচেতন থাকতে হবে। মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হয়ে গেলে এগুলো কারেকশন করা জটিল হয়ে যায়। তাই আমাদের জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের সার্বক্ষণিক কাজ করতে হবে। আমাদের ওয়ারিশানের ব্যাপারেও জটিলতা রয়েছে। নামজারির সময় কাউকে কাউকে বাদ দিয়ে করা হয়েছে হয়ত। আমরা এখনও জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আপডেট করতে পারিনি। আমাদের সচেতন থাকা উচিত। আমরা যে ভাই বা বোনকে বঞ্চিত করছি এটা আমাদের বিবেক দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।
জনপ্রতিনিধিরাও আজকে এ কাজে যুক্ত হয়ে গেলেন। যথা সময়ে যথাযথভাবে আপনাদের অবহিত করা হবে। আমাদের ডিজিটাল জরিপের কারণ আমরা আধুনিক হতে চাই। মন্ত্রী বলেছেন, পাঁচ থেকে সাত বছরে সারা বাংলাদেশে ভূমি তথ্য ডেটাবেজের আওতায় নিয়ে আসা যায়। তবে যেহেতু এখানে আর্থিক বিষয় আছে সেহেতু এখানে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
অনেকের এমনও আছে যে ওয়ারিশ হয়ে নাতিরা জমি ভোগ করছেন কিন্তু জমি এখনও দাদার নামে রয়ে গেছে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। আরেকটা বিষয় আমাদের সার্ভেয়ারদের দেখতে হবে যে নদীর জমি যেন কোনো ভাবেই ব্যক্তি মালিকানায় চলে না যায়।
সেমিনারে জানানো হয়, পাইলট প্রকল্পের কাজ প্রথম শুরু হবে নারায়ণগঞ্জ থেকেই। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের ৭১টি মৌজায় ১৫ হাজার ৪১ দশমিক ৫৫ একর বা ৬০ দশমিক ৮৭ বর্গ কিলোমিটার জায়গায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available