লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের পুরো জেলাতে অবৈধ বেকারিতে সয়লাভ। এ অবৈধ বেকারি গুলোতে তৈরি হচ্ছে মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর পণ্য। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই পৌরসভাসহ জেলা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বেকারি গুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পণ্য তৈরি করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়ক ব্যবহার করে বাজারজাত করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
এসব খাবার খেয়ে শিশুসহ অনেকেই নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন। পৌর এলাকাসহ ইউনিয়ন গুলোর আনাচে-কানাচে অসংখ্য বেকারি গড়ে উঠেছে। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই মানহীন পণ্য উৎপাদনে সয়ালাভ তারা। বেকারির ভিতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বিস্কুট, চানাচুর, কেক, পাউরুটিসহ নানান পণ্য। স্যাঁতসেঁতে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নিন্মমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে এসকল পণ্যসামগ্রী। বেকারিতে ব্যবহৃত জিনিসগুলো ময়লায় পরিপূর্ণ। এছাড়াও নেই এপ্রন ও গ্লাবসের ব্যবহার। শ্রমিকরা খালি হাত ও খালি পায়ে এসব পণ্য তৈরি করছেন।
এ সময় তাদের গা থেকে ঘাম ঝরতে দেখা যায়। টপটপ করে ঘাম পড়তে থাকে আটা-ময়দায়। ব্যবহৃত কড়াইগুলোও অপরিষ্কার, নোংরা টেবিলে ময়দার খামির করে তৈরি করা হয় বিস্কুট। দেখা যায় মাছিরা ঘুরপাক খেয়ে খাবারের ওপর বসে। তৈরি করা জিনিসের ওপর ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভন ভন করছে। পুরানো তেলেই ভাজা হচ্ছে পণ্য সমাগ্রী। ময়লা হাতেই প্যাকেট করা হচ্ছে পণ্য।
উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ ছাড়াই বাহারি মোড়কে খাবারগুলো প্যাকেটজাত করা হয়। লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আইয়ুব আলী পোলের গোড়ায় ফেমাস বেকারিতে গেলে দেখা যায়, আট থেকে দশ বছরের শিশুদের দিয়ে করাচ্ছেন ভারি কাজ। বেকারিটির মালিক রয়েছেন ৭ জন। এদের মধ্যে পাঁচ জন হচ্ছেন কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এবং দুজন হচ্ছেন স্থানীয়। তার মধ্যে দেলোয়ার হোসেন সাদ্দাম নামে একজন পৌরসভার শ্রমিক লীগের সভাপতি পরিচয় দিয়ে বলছেন, এখানে কোনো সমস্যা নেই। এভাবেই নাকি চলছে এই বেকারি।
এক রকম ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সেখান থেকে চলে আসতে বলেন। বিষয়টি জানতে লক্ষীপুর জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ইউসুফ পাটওয়ারির সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এই বেকারির সাথে পৌরসভা শ্রমিক লীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন রয়েছেন। তার মানে অনুমোদনহীন ময়লা আবর্জনাবেষ্ঠিত ফেমাস বেকারিটি চলে শ্রমিকলীগ নেতা সাদ্দামের ইন্ধনে। বেকারিতে নেই লাইসেন্স নেই বিএসটিআই, প্যাকেটের গায়ে লেখা অন্য নাম টু স্টার, নাইস। তাহলে একটি বেকারি কত নামে চলে? পণ্য তৈরির ময়দার ওপর মাছি বসে পাড়ছে ডিম। এই বেকারির প্যাকেটের গায়ে নেই উৎপাদনের তারিখ এবং নেই মেয়াদের তারিখও।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, মেডিকেল তথ্য মতে, ভেজাল কেমিক্যাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা এসব খাবারসামগ্রী খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। পেট ব্যথা, চামরায় চর্মরোগ, কিডনিতে সমস্যা, খাদ্য নালীতে সমস্যা, শরীর দুর্বলসহ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি রয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর লক্ষ্মীপুরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নূর হোসেন বলেন, ভেজাল খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারপরও কোথাও অনিয়ম হলে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য তৈরিতে কোনো ছাড় নয়। ফেমাস ফুড বেকারির বিষয়টি অবগত নই, তবে যখন অবগত হলাম শিঘ্রই খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available