নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের চেরাগপুর গ্রামে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ হুরমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এখানে ‘হুর’ মানে কোন রমণীকে বুঝানো হয় না। গ্রামের একটি বিশেষ বট গাছের নিচে দিনব্যাপী হুড় হুড় (তাড়াহুড়ো) করে এ মেলা শুরু ও শেষ হয় বলে একে হুর মেলা বলে।
চেরাগপুর গ্রামের পুকুর পাড়ে একটি বিশেষ বট গাছের নিচে মাটির একটি ঘরের মধ্যে রয়েছে মন্ডপ ও মাজার। আর এ মাজারে ধর্মবর্ণ বির্নিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ মানত করে থাকেন। প্রতি বছরের বৈশাখের দ্বিতীয় রবিবার এ বটগাছের নিচে মেলা হয়ে থাকে। তবে এ বছর এক মাস পর জৈষ্ঠ্য মাসের রোববার মেলা হয়। কৃষি প্রধান এলাকা হওয়ায় ধান কাটা মাড়াইয়ের পর বটগাছের আশপাশেসহ ফাঁকা মাঠে মেলা হয়। এটি ঐতিহ্যবাহী হুর মাজার মেলা নামেও পরিচিত।
গ্রামীণ এ মেলায় বিভিন্ন পদের মিষ্টান্ন ও খাবারের দোকান, খেলনা সামগ্রী, কসমেটিক, মৌসুমি ফল এবং কৃষিযন্ত্রপাতিসহ আসবাবপত্রের দোকান বসে মেলায়। এমনকি রুই, কাতলা, পাঙ্গাস মাছ এবং গরু ও মহিষের মাংসও বিক্রি হয়। দিনব্যাপী এ মেলা হলেও কসমেটিক ও কাঠের আসবাবপত্রের দোকান থাকে আরও কয়েকদিন।
মানত করে যাদের মনোবাসনা পূরণ হয় তারা এ মাজারে এসে রান্না করে উপস্থিত সবার মাঝে খাবার বিতরণ করেন। আবার অনেকে এখানে পরিবারের সবাই দল বেঁধে এসে রান্না করে খান। আশপাশের অন্তত ১৮-২০টি গ্রামের মানুষের পদচারণায় মেলা প্রাঙ্গন এক মিলন মেলায় পরিণত হয়। দীর্ঘদিন থেকে এ মেলা হয়ে আসছে এবং উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় মেলা এটি।
স্থানীয়রা জানান, হুর মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে এ মেলায় মানুষ আসে। এছাড়া মেলার সময় মেয়ে ও জামাইকে দাওয়াত করে নিয়ে আসা হয়। একদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের আগমনে যেন আনন্দ উৎসব বিরাজ করে।
মাজারের খাদেম শুকচান বলেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষরা মানত করে থাকেন। তাদের আশা পূরণ হলে পরে এ মাজারে এসে রান্না করে সবাইকে খাওয়ায়। দেশ স্বাধীনের পর থেকে বটগাছের নিচে এ মাজারে মেলা হয়ে আসছে।
মিষ্টান্নের দোকানী উজ্জল কুমার বলেন, দিনব্যাপী মেলা হলেও একদিন আগে এসে বিকেল থেকে দোকান সাজিয়ে বেচাকেনা শুরু করেছি। দিনব্যাপী মেলায় লক্ষাধিক টাকার বিভিন্ন মিষ্টান্ন বিক্রি হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা কিছুটা কম। এখনো ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়নি। তাই অনেকের হাতে টাকা-পয়সা নেই। এ কারণে মেলায় মানুষের পরিমাণ কিছুটা কম হয়েছে।
মেলা কমিটির সভাপতি ও ইউপি মেম্বার জাকির হোসেন জানান, এ হুর মেলায় ধর্মবর্ণ বির্নিশেষে বিভিন্ন এলাকা থেকে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের আগমন ঘটে। কবে থেকে এ মেলা হয়ে আসছে তা জানেন না স্থানীয়রা। মেলা উপলক্ষে এ গ্রামে মিলন মেলায় পরিণত হয়। এবারের মেলায় দুই শতাধিক বিভিন্ন দোকান অংশ নিয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available