নীলফামারী প্রতিনিধি: নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউপি থেকে কালিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের দুই দিন পরেই কার্পেটিং (পিচ ঢালাই) উঠে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কাজ অব্যাহত রাখার প্রতিবাদে ১৮ মে শনিবার সকাল ১১টার দিকে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ধূলামিশ্রিত অতি নিম্নমানের স্থানীয় পাথর এবং পরিমাণে কম ও নিম্নমানের বিটুমিন (ইরানি) ব্যবহার করায় কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ জানিয়েও কোনো সুফল মিলেনি। প্রতিবাদ করায় উল্টো তাদের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়ে পুলিশি হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এলাকাবাসী আরও বলেন, গত ছয় মাস পূর্বে রাস্তাটির সংস্কারকাজ শুরু হয়। গত সোমবার রাস্তাটির কার্পেটিং শুরু করেন ঠিকাদার। কিন্তু বুধবার থেকেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। হাত দিয়েই তুলে ফেলা যাচ্ছে রাস্তার পিচ। ঠিকাদার ও এলজিইডির প্রকৌশলীদের যোগসাজশে নিম্নমানের ও কম নির্মাণসামগ্রী দিয়ে রাস্তাটি সংস্কার করছেন ঠিকাদার। ধূলামিশ্রিত স্থানীয় পাথর, নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারের সময় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হয়নি। ঠিকাদার রাস্তার অনেক স্থানে খোয়ার পরিবর্তে মাটিও ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার ৩০০ মিটার সড়কটির সংস্কারকাজ পেয়েছেন জামান ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে কাজটি করছেন নাসিমুল একরাম নামের সাব-ঠিকাদার।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পুরাতন ইটের খোয়া ও কার্পেটিং ভালোভাবে না তুলেই আমদানি করা নিম্নমানের ইরানি বিটুমিন দিয়ে রাস্তাটি কার্পেটিং করছেন ঠিকাদার। নির্মাণকাজে নিম্নমানের পাথর ও তিন থেকে ৬ ইঞ্চি বড় ইটের টুকরা ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া দরপত্রে সড়কের প্রস্থ ১০ ফুট থাকলেও করা হচ্ছে ৯ ফুট ৯ ইঞ্চি মাত্র।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন-অর-রশিদসহ প্রায় ২০ জন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, রাস্তা সংস্কারকাজে নিম্নমানের এবং কম পরিমাণে খোয়া, পাথর ও বিটুমিন ব্যবহারের প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসীকে গালিগালাজ ও হুমকি দিয়েছেন ঠিকাদারের লোকজন। আগামী দুই-চার মাসের মধ্যেই এই রাস্তার কার্পেটিং পুরোপুরি উঠে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে রয়েছে। এখন পর্যন্ত যতটুকু কাজ হয়েছে, তা এই সড়ক রক্ষায় কখনো টেকসই হবে না। এ সকল নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের ফলে টেকসই সড়ক উন্নয়ন বিঘ্নিত হবে।
নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে সাব-ঠিকাদার নাসিমুল একরাম বলেন, তাপমাত্রার কারণে পিচ জমাট বাঁধতে সময় লাগছে। আমি তো সেখানে যাই না। এলজিইডির লোকজনের উপস্থিতিতে রাস্তা কার্পেটিং ও সংস্কার করা হয়। থানা ইঞ্জিনিয়ার (উপজেলা প্রকৌশলী) ও অফিসের লোক সিদ্দিককে (উপসহকারী প্রকৌশলী) বলে দিয়েছি আপনারা দেখে নিয়ে কাজ করেন। আমদানি করা বিটুমিন ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, দেশীয় বিটুমিন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ইরানি বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম বলেন, অনিয়মের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। তারা নির্দেশনা দিলে আমরা পদক্ষেপ নেবো।
জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ হাসান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা করা হবে। কাজে অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available