কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারে বেপরোয়াভাবেই চলছে অধিকাংশ গরু মাংস ব্যবসায়ী (কসাই)। সরকারের বেঁধে দেওয়া দরদামের তোয়াক্কা করছে না তারা। অভিযোগ রয়েছে, কসাইরা মহিষের মাংস গরুর মাংস বলে বিক্রি করছে। এছাড়াও দীর্ঘ দিনের ফ্রিজে রাখা বাসি মাংস বিক্রি ও ওজনে কম দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার মাংস ব্যবসায়িরা কোথাও ৭০০, কোথাও ৭৫০ আবার কোথাও ৮০০ টাকা দামে বিক্রি করছে গরুর মাংস। দাম বেশি রাখার পাশাপাশি ক্রেতাদের সাথে করা হচ্ছে প্রতারণা। এমনকি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী (কসাই) ভয়াবহ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে গরুর মাংসের অভ্যন্তরে ঘোড়া কিংবা অন্যান্য প্রাণীর মাংস মিশ্রিত করে চালিয়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এতে একদিকে যেমন মানবদেহে নানান জটিল রোগের জন্ম নিচ্ছে, তেমনি আর্থিকভাবেই প্রতিনিয়ত ঠকছে ক্রেতা সাধারণ। তবে প্রশাসনের তদারকি ও দায়সারাভাবে চলার কারণে এসব অসাধু ব্যবসায়িরা বেপরোয়া ও লাগামহীন হয়ে পড়েছে বললেন অভিযোগ ভোক্তা সাধারণের।
এদিকে কসাইদের প্রতারণা বন্ধে ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
কক্সবাজার সিটি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শফিক বলেন, ২৪ মে শুক্রবার সকালে কক্সবাজার সদর উপজেলা বাজারের কসাই আব্দুল মালেকের দোকান থেকে মাংস ক্রয় করি। দোকানি বললো এটি দেশি গরুর মাংস এবং এর পাশেরটা মহিষের মাংস। আমিও সরল মনে দরদাম করে রানের মাংস থেকে আড়াই কেজি মাংস নিলাম। তখন দেখতে মনে হয়েছিলো মাংস টাটকা ও স্বাভাবিক। কিন্তু বাড়িতে রান্না করার পর খেয়ে দেখলাম, এতে গরুর মাংসের কোন স্বাদ ও ফ্লেবারের অস্তিত্ব নেই। পেলাম অন্য কোন প্রাণীর অস্বাভাবিক পঁচা বিশ্রী গন্ধ, যা অসহনীয়। রান্নার প্রথমে এক টুকরো মাংস মুখে তুলতেই মা বমি করে দিলো। অন্য সদস্যদেরও একই অবস্থা। পরে রান্না করা প্রমাণ স্বরূপ অল্প মাংস রেখে দিয়ে বাকিগুলো ফেলে দিতে বাধ্য হলাম। তাহলে কি ভয়াবহ প্রতারণার আশ্রয়ে তারা ক্রেতা সাধারণকে গরুর মাংস বলে, ঘোড়া কিংবা অন্য কোন প্রাণীর মাংস ধরিয়ে দিচ্ছে? না দীর্ঘ দিনের ফ্রিজিংয়ের মাংসকে নানা প্রক্রিয়াজাত করে সঠিক দাম নিয়ে ক্রেতা ঠকাচ্ছে? এ বিষয়ে নিয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কক্সবাজারের সিনিয়র বিজ্ঞ আইনজীবী সাজ্জাদুল করিম তার ফেইসবুক ওয়ালে লিখেন, মহিষের মাংস গরুর মাংস বলে বিক্রি, বাসি মাংস বিক্রি, ওজনে কম দেওয়া, অত্যাধিক হাড় দেওয়া, দাম বেশি রাখা; কসাইদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কুরবানির মাংস সিদ্ধ হয় মিনিট দশকে। আর কসাইয়ের মাংস সারাদিনেও সিদ্ধ হতে চায় না। ফলে অনেককেই গিন্নির কটু বাক্যবাণে বিদ্ধ হতে হয়। কসাইখানা নিয়ন্ত্রণে যেন এদেশে কর্তৃপক্ষ নেই। একজন মৌলভী টাইপের লোক সাইকেল নিয়ে গরু, মহিষ জবাইয়ের অনেক পরে সীল মারতে আসেন। শুনেছি তিনি পৌরসভার লোক। তিনি না দেখে সীল দিলে চলে যান। তার কাজ হচ্ছে প্রাণিটি গরু-মহিষ না অন্য কিছু অথবা প্রাণীটি রোগাক্রান্ত কিনা? সেটা দেখা। কিন্তু না দেখেই তিনি সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছেন। এভাবেই চলছে দিনের পর দিন। বছরের পর পর। ভোক্তার স্বার্থ দেখার কেউ নেই। যেন উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ!
অন্যদিকে ফুটপাত দখল করে দোকানের সামনেই গরু-মহিষ জবাই করে, সেই রক্ত আর নারী-ভুড়ি ড্রেনে ফেলতে দেখা গেছে। এতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এছাড়া ফুটপাত দখল হয়ে সাধারণ মানুষ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। শহরজুড়ে অধিকাংশ কসাইরা আইন-কানুন তোয়াক্কা না করেই নিজেদের ইচ্ছা স্বাধীন মত কাজ করছে। বেপরোয়া এসব পশুর মাংস অসাধু বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান জরুরি বলে মনে করছে সর্বসাধারণ।
জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম জানান, এটি ঘোড়ার মাংস কি না তা সন্দেহ রয়েছে। তবে দীর্ঘ দিনের ফ্রিজিং করা মাংস হতে পারে। তবে ওই মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
কক্সবাজার জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসান জানান, আমরা সদর উপজেলা বাজারের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে যে অসংগতি রয়েছে, তা নিয়ে মাঠে নামবো। তবে উপরে উল্লেখিত বিষয়ে নিয়ে জেলা প্রাণিসম্পদের সাথে একটু যোগাযোগ করা হবে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারাজানা রহমান জানান, এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, ওসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available