রংপুর ব্যুরো: সরকারি কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী মিলে প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ায় নির্বাচন কমিশন অভিযোগ দিয়েছেন রংপুর জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও বদরগঞ্জের দুইবারের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং বর্তমান চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলে রাব্বি সুইট। ঘটনায় ওই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার ২৪ মে রাতে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা কুতুবপুর ইউনিয়নের অরুননেছা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে আসছে এবং আগামীতেও করবে। তার দৃষ্টান্ত নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে রেখেছেন। নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নানান আচরণ বিধি নির্বাচন দিয়েছেন, তা মেনেই আমরা প্রার্থী ও সমর্থকরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। কিন্তু আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পক্ষে তার আপন ভগ্নিপতি নির্বাচন কমিশনের আইন বিভাগের যুগ্মসচিব মাহবুব রহমান সরকারের স্ত্রী মাছমুদা চৌধুরী ওরফে মিতা ও প্রার্থীর আপন ভাই টিসিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবুল হাসনাত চৌধুরী চন্দন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গিয়ে নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে ভোট চাচ্ছেন।
ফজলে রাব্বি সুইট সাংবাদিকদের সামনে প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকারের কোন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্বয়ং নির্বাচন কমিশনে যুক্ত একজন যুগ্ন সচিব ও তার স্ত্রী প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া কি আচরণ বিধি লংঘন করে না? তারা কিভাবে নির্বাচন কমিশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্যে জনগণের কাছে এসে প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে ভোট চান, আমি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে জবাব চাই।
তিনি আরও জানান, আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন নির্বাচন কমিশনে যুগ্ম সচিব পদে আমার ভগ্নিপতি আছেন, একটি ভোট পেলেও আমি বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হবো। আমার বিরুদ্ধে যে কর্মকর্তা কথা বলবে, তাকে আমি বদলি করিয়ে ছাড়বো। ইতোমধ্যেই বদরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফকে বিনা কারণে সচিবের পক্ষের সেই প্রার্থী বদলি করিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আহসানুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, আবুল হাসান চৌধুরী চন্দন রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সদ্য প্রয়াত মোজাফফর হোসেনের মেয়ের জামাই। টিসিবিতে চাকরি হওয়ার পর থেকে চন্দন এখন বদরগঞ্জে সবাইকে টাকার গরম দেখান। সে টাকার গরমে সরকারি কর্মকর্তা হয়েও আচরণবিধি মানছেন না, সে নির্বাচন কমিশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাচ্ছেন এবং নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। একই কাজ করে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন তার বড় বোন ও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ন সচিব (আইন, অনু বিভাগ) মাহবুব রহমান সরকারের স্ত্রী মাছমুদা চৌধুরী মিতা। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে জানিয়েছি, দ্রুত যেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুতুবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান চাপুল সাহা, আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব ও উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মিমসহ আরও অনেকে।
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাহনাজ বেগম জানান, নির্বাচন কমিশনের দেওয়া আচরণবিধি সবাইকে মেনে চলতে হবে। আচরণবিধি ভঙ্গ করলে কে কার স্ত্রী বা কে কার ভাই, এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমাদের মোবাইল কোর্টের গাড়ি রয়েছে, আমরা অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্ট পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আচরণবিধি ভঙ্গ করার কোন সুযোগ নেই বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, চতুর্থ ধাপে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে। এই উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৪৩ হাজার ১০৮ জন। পুরুষ ১ লাখ ২২ হাজার ৭০৫ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৩৯৫ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১০৩টি। শান্তি পূর্ণ ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এমনটাই প্রত্যাশা এলাকার ভোটারদের।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available