লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটে এবার ধানের বাম্পার ফলন হলেও অধিক খরচের কারণে কৃষকরা রয়েছে চরম দুশ্চিন্তায়। চলতি ইরি-বোরো মৌসুম কৃষকদের জন্য সর্বোচ্চ খরচের বছর। সেচযন্ত্রের জ্বালানি, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম ছিল অনেক বেশি। এবারে খরার কারণে সেচ দিতে লেগেছে অনেক খরচ। একই সঙ্গে বেড়েছে সার, কীটনাশকসহ শ্রমিকের মজুরি। এই সীমাহীন খরচের মৌসুম শেষে ধানের কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, হিসাব অনুযায়ী এবছর প্রতি মণ বোরো ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজারের বেশি, যদিও লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। কিন্তু জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে এলাকাভেদে হাইব্রিড ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকা সরু জাতের ধানের দাম ১ হাজার টাকা বা তার নিচে। এই দামে ধান বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, গত বোরো মৌসুমে এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে বোরো উৎপাদনের খরচ ছিল ১০ থেকে ১১ হাজার টাকার মধ্যে, যা এবছর সেচ, সার, কীটনাশক ও মজুরি বাড়ায় এলাকা ভেদে দাঁড়িয়েছে ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সেচ খরচ বেড়েছে এক হাজার টাকার বেশি। এছাড়া বীজ ও কীটনাশক কিনতে হয়েছে চড়া দামে। ধান পরিচর্যা, কাটা শ্রমিকের মজুরি, মাড়াই ও পরিবহনসহ অন্য সব ধরনের খরচও বাড়তি হয়েছে। কয়েক দফায় সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় নিজের পুঁজি নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। কৃষকেদের দেয়া হিসেব অনুযায়ী ধান বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে।
দুর্গাপুরের কৃষক মনু মিয়া বলেন, গ্রামের অনেক কৃষক ধার দেনা করে ধান চাষ করেছে, সার ও সেচের খরচ বেশি হওয়ায় ধার করে ধান চাষ করা টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। বিঘা প্রতি প্রায় দুই হাজার টাকা সারের জন্য ও সেচে আরও হাজার টাকা বেশি এবং ধান কর্তনে ৮ থেকে ৯ শত টাকা বেশি লাগছে। ধান বিক্রি করে সেটা পরিশোধ হচ্ছে না। পাওনাদারের তাগাদার কারণে বাধ্য হয়ে কম দামে বাজারে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, সরকার থেকে প্রতি কেজি ধান নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ টাকা যা মণ প্রতি হয় ১২৮০ টাকা কিন্তু কৃষকরা বলছেন, অসাধু ধান ব্যবসায়ী আড়তদারদের কারণে ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকায় ধান বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের এতে লোকসান গুণতে হচ্ছে কৃষকদের।
ভেলাবাড়ি ফলিমারী গ্রামের কৃষক লিটন বলেন, আমার জমিতে এবার বোরোর ফলন বাম্পার হয়েছে। আশপাশের সবারই ফলন ভালো হয়েছে। তারপরেও খরচের কারণে কেউ খুশি নন। কারণ খরচের তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি। তিনি আরোও বলেন, আবাদের ব্যয় ছাড়াও প্রতি বিঘায় ধান কাটতে খরচ পড়ছে পাঁচ হাজার টাকা। জমি থেকে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসতে আরও এক হাজার টাকা এবং ধান মাড়াই করতে খরচ হয়েছে আরও ৫০০ টাকা। ধান রোপণ থেকে শুরু করে ঘরে ওঠানো পর্যন্ত তার খরচ প্রায় ১৭ হাজার টাকার মতো। তিনি দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
সদর উপজেলার মোগলহাট চর ফলিমারির কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, ধান রোপন থেকে শুরু করে গোলায় তোলা পর্যন্ত যে পরিমাণ খরচ হয় বর্তমান বাজারদরে কৃষকের কোনো লাভ থাকে না, শুধু ধান কাটা ও বহনের জন্য প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমির জন্য শ্রমিক নিচ্ছে ৫ হাজার টাকা এলাকা ভেদে আরও বেশি হতে পারে তারপরেও কৃষি শ্রমিকের সংকট দেখা যাচ্ছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) এ বি এম আরিফুল হক বলেন, এ বিষয়ে জানা ছিলো না, তবে কৃষকদের যাতে লোকসান না হয় এজন্য ধানের বাজার মনিটরিং করা হবে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, গোটা জেলায় ১০টি ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার দেয়া হয়েছে, এছাড়াও জেলার কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available