সিলেট প্রতিনিধি: টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ, কানাইঘাটে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এদিকে নদীর পানি নেমে গেলেও নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে চরম ভোগান্তি।
অনেক এলাকায় খাদ্য সংকটও দেখা দিয়েছে। বন্যায় ফসল, মৎস্য ঘের, গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিম্নাঞ্চলের উপজেলাগুলোর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে এখনো কিছু এলাকায় পানি রয়েছে। বন্যা প্লাবিত এলাকাগুলোতে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া অনেকের বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ১ মে শনিবার পর্যন্ত সিলেটের সিটি কর্পোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড ও ৮টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের ৭৮১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যা-কবলিত হয়ে পড়েছেন ৬ লাখ ৯ হাজার ৭৩৩ জন বাসিন্দা। এ অবস্থায় জেলার ১৩টি উপজেলায় ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ৩৪২ জন অবস্থান করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ১৩ দশমিক ৫৮ সেন্টি মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৮৩ সেন্টি মিটার উপরে। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৮৭ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৭ সেন্টি মিটার উপরে। কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে পানি ১৭ দশমিক ৩২ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা বিপদসীমার ১ দশমিক ৯২ সেন্টি মিটার উপরে। কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি ১৩ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৮ সেন্টি মিটার উপরে। তাছাড়া লুবা, সারি গোয়াইন, ডাউকি, ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার নিচে অবস্থান করছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ দশমিক ৩ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৪ মিলি মিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, নতুন করে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সিলেটের প্রধান নদ-নদীর পানি সমতা হ্রাস পাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির আর উন্নতি হবে।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, পানি বন্দির সংখ্যা কমেছে। বন্যা পরবর্তী কার্যক্রমের কাজ চলছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অনেকের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছের তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। দ্রুত সেগুলো মেরামত করা হবে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে হাওরঅঞ্চলের কিছু মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছেন, তারা পানির জন্য বের হতে পারছেন না আবার অনেকের নৌকাও নেই তাদের বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। উপজেলায় ১০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১৩জন ট্যাগ কর্মকর্তা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বন্যাদুর্গত এলাকায় বন্যা পরিবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ইতোমধ্যেই উপজেলায় ৩৯ মেট্রিক টন চাল, শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হয়েছে। এখনো ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন জানান, উজান থেকে ভাটির দিকে পানি নামতে শুরু করায় সিলেট মহানগর, সিলেট সদর, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল নতুন করে পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। জেলার বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available