পাবনা প্রতিনিধি: নাগরিকদের সেবা প্রদানে ব্যর্থ হলেও নানা কারণ দেখিয়ে পৌর সভাধীন এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের কাছ থেকে দফায় দফায় আদায় করা হচ্ছে টাকা। কখনো স্মার্ট কার্ড আবার কখনো অন্য কারণ দেখিয়ে পৌরবাসীর পকেট কাটছেন ঈশ্বরদী পৌর মেয়র। এসব কারণকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং অমাবনিক আখ্যাদিয়ে ঈশ্বরদী পৌর সভার আরোপিত সকল প্রকার কর সমন্বয় করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঈশ্বরদীর সচেতন নগরবাসী ও ঈশ্বরদী অনলাইন প্রেসক্লাব।
৯ জুন রোববার বিকেল ৪টায় ঈশ্বরদী প্রেসক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
ঈশ্বরদী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত ভাটাপাড়া এলাকার মো. রনি জানান, তার বাড়ির পূর্বের করছিল ১০০ টাকা, যা এবছর বাড়িয়ে ১৬২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড ঈদগাহ রোড এলাকার সবুজ জানান, বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্সও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আগে ছিল ৮০০ টাকা, নতুন করেছে ২২৫০ টাকা। মনে হচ্ছে এটা মগের মুল্লুক।
৪ নং ওয়ার্ড আকবরের মোড় এলাকার বাসিন্দা মো. রুহুল আমিন বলেন, বাড়ির করে এবার বিশাল প্রমোশন পেয়েছি। আগে ছিল ২০০ টাকা, নতুন হয়েছে ১০,৮০০ টাকা। এবার বাড়ি বেচেই কর দিতে হবে পৌরসভাকে।
এমন ভুতুড়ে পৌর করের তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য প্রদানকালে পৌর শহরের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান সরদার বলেন, ঈশ্বরদীর মতো একটি পৌরসভার দ্বায়িত্ব এমন অযোগ্য মেয়রের হাতে বলেই ঈশ্বরদীবাসীকে এত ভোগান্তি সইতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ, পানি এবং ময়লার বিল পরিশোধের পরও একাধিকবার একই বিল পাঠিয়ে মাসের পর মাস জনগনকে ভোগান্তিতে ফেলছে। এবার আবার কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই কয়েকগুণ বাড়িয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করেছে, যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আর এসব কাজ কেবল একজন অনভিজ্ঞ প্রতিনিধির দ্বারাই করা সম্ভব।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মেহেদী হাসান বলেন, সরকারি সকল প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিতে ভরে গেছে। সেই সাথে অযোগ্য আর অস্বচ্ছ মানুষদের দিয়ে দেশ পরিচালনা করায় দেশের মানুষকে উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজারে যুদ্ধ করে বাঁচতে হচ্ছে। তারপর আবার যদি মাথা গোজার শেষ আশ্রয়স্থলে এমন ভুতুড়ে পৌরকর নির্ধারণ করা হয় তাহলে সাধারণ মানুষ পথে বসে যাবে।
ঈশ্বরদী পৌর ৯নং ওয়ার্ডের মধ্যঅরণকোলা এলাকার বাসিন্দা এবং সাপ্তাহিক সময়ের ইতিহাস পত্রিকার সম্পাদক শেখ মহসীন বলেন, আগে আমার কর ছিল ২৫০০ টাকা, তা বাড়িয়ে এবার পৌরসভা ধার্য করেছে ১৬ হাজার টাকা, যা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো না।
ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুর রহমান বিরু বলেন, দেশ ডিজিটাল হয়েছে, আমরা পৌরবাসী সেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে আমাদের হোল্ডিং কর জমা দিতে চাই। কোনো চোরের হাতে নয় আমরা ব্যাংকের মাধ্যমে ট্যাস্ক দিতে ইচ্ছে পোষন করি। তিনি বলেন, সরকারের ধার্যকৃত ভ্যাটের চার্ট জনতার বোঝার সুবিধার্থে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে টাঙ্গিয়ে রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পৌরসভার সর্বস্তরের ভ্যাট সমন্বয় করতে না পারলে দ্বায়িত্ব ছেড়ে দিন। আমরা আমাদের দাবি আদায় না করে বাড়ি ফিড়ব না। প্রয়োজনে পৌরসভা ঘেরাও করবো।
সচেতন নগরবাসীর আহবায়ক এবং সাংবাদিক ববি সরদার বলেন, পৌর কর সমন্বয় করা না হলে আমারা করের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করব।
এসময় তিনি পৌর মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ঠিকমত দ্বায়িত্ব পালন করতে না পারলে পেছনের দরজা দিয়ে পালাতে হবে। কেননা এর আগে ঈশ্বরদীতে যেসব মেয়র দ্বায়িত্ব পালন করেছেন, তারা তাদের যোগ্যতা দিয়ে শহরের মানুষকে শান্তিতে রেখেছিলেন। কিন্তু আপনি এই শহরের মানুষকে ঘর ছাড়া করার বন্দোবস্তো করার জন্য ভুতুড়ে হোল্ডিং বসিয়েছেন।
মানববন্ধনের প্রধান আয়োজক আ ফ ম রাজিবুর আলম ইভান বলেন, পৌর শহরের রাস্তাগুলোর বেহাল দশা, মশার উপদ্রবে টিকে থাকা দায়, তবুও এই কার্ড ওই কার্ড বাবদ যখন যা ইচ্ছে সেই মতো কর আদায় করে যাচ্ছেন। এ যেন মগের মুল্লুক। বছরজুড়ে নিয়মিত ট্যাক্স নেন, সেবা নেই তবুও ট্যাক্স বাড়াবেন কেন? বন্ধ করুন এসব ভেল্কিবাজি। এই অযৌক্তিক পৌরকর বন্ধ না করলে ঈদের পর কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে মানববন্ধনের সমাপ্তি ঘোষনা করেন তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available