মোহাম্মদ শফিক, জেলা প্রতিনিধি (কক্সবাজার) : হাজার হাজার প্রাক্তন ও নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে ঐতিহ্যবাহী কক্সবাজার সরকারি কলেজের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘হীরক জয়ন্তী’ উৎসব উদযাপিত হয়েছে। ১৮ মার্চ শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত চলে এই অনুষ্ঠান। এসময় পুরো ক্যাম্পাস মিলন মেলায় পরিণত হয়। পুরনো বন্ধু-বান্ধবীরা একসাথে মিলিত হয়ে ভীষণ আনন্দ-উচ্ছ্বাস, আড্ডায় ও মস্তিতে মাতোয়ারা ছিলো সবাই। এক আন্দনঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করেছিলো পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। তবে অনুষ্ঠানে ব্যাচভিত্তিক সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মানদণ্ড, খাবার-দাবার, উপহার সামগ্রী, ড্রেসসহ বিভিন্ন বিষয়ে আয়োজক কমিটির উপর ক্ষুদ্ধ ছিলো অনেক শিক্ষার্থী। তাদের বক্তব্য আয়োজক কমিটির স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে অনুষ্ঠানে ছিলো নানা অব্যবস্থাপনা।
মিলন মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভিপি) অধ্যাপক ড.শিরিন আক্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজের প্রথম (জিএস) বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী, অধ্যক্ষ প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এ.কে.এম ফজলুল করিম চৌধুরী, সাবেক (ভিপি) এড.নুরুল ইসলাম, হীরক জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব ও উখিয়ার সন্তান মোরশেদ (দুলাল), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুক্তার আহমেদ, অনুষ্ঠানের যুগ্ন-আহবায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক এড. রনজিত দাশ, এড.তাপস রক্ষিত, কলেজের সাবেক (জিএস) এম. হাসেম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনিন সরওয়ার কাবরিসহ আরও অনেকে।
সকাল থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে হাজার হাজার প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের মিলন মেলায় পরিণত হয় পুরো ক্যাম্পাস। ছিলো না রাজনৈতিক কোন ভেদাভেদ। সকল মতাদর্শের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ৬২ বছর পর একসাথে মিলিত হয়ে অনান্দ উচ্ছ্বাসে আড্ডায় ও মস্তিতে মাতোয়ারা ছিলো সবাই। হইহুল্লোড়, এদিক ওদিক ছোটাছুটি, সবাই একসাথে ছবি তুলা, খাওয়া-দাওয়া ও গান বাজনায় মেতে উঠে তাঁরা। দীর্ঘদিন পর সহপাঠীদের মধ্যে একজন অপরজনকে দেখে, ‘কি রে কেমন আছিস তুই’ বলে কুশল বিনিময় করেছিলো। আবার অনেকেই আগের স্মৃতি স্মরণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হতেও দেখা গেছে।
তবে একই সাথে এতো শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে বিশেষ করে খাবার-দাবার ও উপহার সামগ্রী ড্রেস নিয়ে বিশৃঙ্খলাও দেখা গেছে। অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ ছিলো অনুষ্ঠানে বহিরাগতদের উৎপাতে এই কলেজের মূল ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকেই খাবার পায়নি, ড্রেস পায়নি এবং অন্যান্য বিষয়েও ছিলো অব্যবস্থাপনা।
“হীরক জয়ন্তী” উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও অনুষ্ঠানের পরিচালক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, ‘এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীট। প্রথমবারের মতো এত বড়ো একটি আয়োজন সফল করতে প্রায় এক থেকে দেড় মাস আমি এবং আমার সহর্কমীদের নিয়ে রাতদিন নিরলস কষ্ট করেছি। তবে এই অনুষ্ঠান নিয়ে অনেকেই রাজনীতিতে নেমেছে এবং নানা প্রশ্ন তুলতেছে। এখানে রেজিস্ট্রেশনের চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ হয়েছে। অর্থাৎ ৭ হাজার মানুষের মাঝে ১৫ হাজার মানুষ হয়েছে। তাই একটু বাড়তি চাপ ছিলো। তবে খবাবা-দাবার থেকে শুরু করে কোন কিছুর ঘাটতি ছিলো না। সব কিছু পর্যাপ্ত ছিলো। সুন্দর ব্যবস্থাপনায় এ অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমি কাজের মানুষ, আর যে কাজ করে তার বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই এটাই স্বভাবিক। পাশাপাশি হাশরের ময়দানেও এরকম প্রশ্ন থাকবেই, সুতরাং প্রশ্ন প্রশ্নের মধ্যেই থাক। আমি চাই বাস্তবায়ন। আমি মনের আত্মতৃপ্তি ও বড় উদার মনমানসিকতা নিয়ে এ আয়োজন সফল করেছি আমার সারথিদের নিয়ে।’
অনুষ্ঠানে সার্বিক তত্বাবধানে ছিলো উখিয়া উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুল আজিম কনক। তাঁরা জানান, অনুষ্ঠানে প্রায় ১৫/১৬ হাজার অতিথি খাবার খেয়েছে। অতিথিদের জন্য ১০টি গরু, ৪৫টি খাসি, ৫শত মুরগী রান্না করা হয়েছিলো এবং বসার সুব্যবস্থা ছিলো।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available