মো. বিল্লাল হোসেন, ভোলা প্রতিনিধি: ভোলায় একের পর এক বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পরছে ভোলাবাসী। গত পাঁচদিনে বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২টি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা এই সাপগুলোর মধ্যে এলাকাবাসীরা ১১টি সাপ মেরে ফেলেছে এবং একটি বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে।
জেলার সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলার মূল ভূখণ্ড ছাড়াও চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি ও খেলার মাঠে একের পর এই বিষাক্ত সাপ দেখা গেছে।
জানা গেছে, ২০ জুন বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার শিবপুরের ‘গরিবের ডুবাই নামে খ্যাত’ চায়না ইপিজেড বালুর মাঠে একটি, তজুমউদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের একটি বসত বাড়ির সামনে ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের জসিম হাওলাদারের বাড়িতে একটি রাসেলস ভাইপার পাওয়া যায়।
১৯ জুন বুধবার বিকেলে জেলার তজুমউদ্দিন উপজেলার চৌমুহনী এলাকায় খেলার মাঠে দেখা মিলে এই সাপের। এর আগে মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশায় ইউনিয়নে পাকার মাথা এলাকায় বসত বাড়ির পাশের জালের সঙ্গে পেঁচানো অবস্থায় একটি রাসেল ভাইপার পাওয়া যায়। মঙ্গলবার রাতে দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের জালু মাঝির বসতঘর থেকেও একটি রাসেলস ভাইপার উদ্ধার করা হয়।
এর আগে ১৬ জুন রোববার লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ এলাকায় একটি বাড়ির শৌচাগারে এ সাপ দেখা যায়।
এছাড়াও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা ও সাগর উপকূল উপজেলা চরফ্যাশনের বিভিন্ন ইউনিয়নে আরও ৫টি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে সাপগুলোকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।
এর মধ্যে তজুমউদ্দিন উপজেলায় পাওয়া একটি সাপ বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে জেলাজুড়ে রাসেল ভাইপার আতঙ্ক বিরাজ করছে সর্বসাধারণের মাঝে।
স্থানীয় জানায়, বেশ কয়েকদিন ধরে জেলার সর্বত্র এই সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। কিন্তু এর আগে সাগর উপকূল উপজেলা চরফ্যাশনের কুকরি-মুকড়ি, ঢালচর কিংবা মনপুরা উপজেলায় দেখা মিললেও এবার সদর উপজেলাসহ প্রায় সবস্থানেই সাপের বিচরণ বাড়ছে। একের পর এক বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের দেখা মিলছে বিভিন্ন এলাকায়।
স্থানীয় জেলে জয়নাল মাঝি বলেন, নদীতে মাছ শিকার করে ঘাটের দিকে যাওয়ার সময় বালুর মধ্যে এই সাপটি দেখতে পাই। এই সাপ এর আগে আর কখনো দেখিনি। সাপটি দেখতেও অনেক ভয়ানক। অন্য সাপের থেকে দেখতে আলাদা। সাপটি দেখে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে মেরে ফেলে।
জালু মাঝি জানায়, তার বসতঘরে খাটের নিচে তিনটি বিড়াল মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে ঘরের লোকজন খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারকে ঘর থেকে বের হতে দেখেন। তখন সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। একপর্যায়ে সাপটিকে খুঁজে পিটিয়ে মেরে ফেলে উপস্থিত লোকজন।
সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিশু বলেন, এর আগে আমার ইউনিয়নে এই বিষধর সাপের দেখা পাইনি। পর পর দুই দিন এই সাপের সন্ধান মেলায় আমার ইউনিয়নবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমি ও বনবিভাগের লোকজন আসার আগেই সাপটি স্থানীয়রা মেরে ফেলে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, রাসেল ভাইপার সাপ লোকালয়ে সাধারণত খুব কমই দেখা যায়। বাচ্চা দেয়ার কারণে হয়তো ওই সাপটি লোকালয়ে চলে এসেছে। তবে সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম শফিকুজ্জামান, চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপ সবচেয়ে বিষাক্ত ও এর অসহিষ্ণু ব্যবহার ও লম্বা বহির্গামী বিষদাঁতের জন্য অনেক বেশি লোক দংশিত হোন। বিষক্রিয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণে দীর্ঘ যন্ত্রণার পর মৃত্যু হয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available