মো.তৌহিদুর রহমান তুহিন, সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: খাবারসহ সব ধরণের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় একের পর এক বন্ধ হচ্ছে মুরগির খামার। লোকসানের কারণে দুই বছরে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন ১৯২ খামারি। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন পাঁচ শতাধিক শ্রমিক। এ জন্য খামারিরা মুরগির বাচ্চা, খাদ্য ও ঔষুধের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছেন। খামারগুলো বন্ধ হওয়ায় সাদুল্লাপুরে এবার রমজানে ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ হবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন,খামারিরা সংকটে পড়লেও বন্ধ রাখা হয়েছে ঋণ বিতরণ। ২০১০ সালের পর প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ঋণ পাননি কোনো খামারি। ফলে টিকেথাকা খামারগুলোর মধ্যে আরও বেশ কয়েকটি খামার বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে জানা গেছে, উপজেলায় বছরে ডিমের চাহিদা ৩ কোটি ৫০ লাখ পিস। কিন্তু ২ কোটি ৪০ লাখ পিস ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এতে বছরে ডিমের ঘাটতি ১ কোটি ১০ লাখ পিস। বছরে মাংসের চাহিদা ১৪ হাজার ৪০০ টন। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মাংস পাওয়া গেছে ১ হাজার ২০০ টন। মাংস প্রাপ্তির হার ৭৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। ঘাটতি ২৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, মুরগির খামার কমতে থাকায় ডিমের ঘাটতি বাড়তে পারে। মাংস উৎপাদন কমবে। রমজানে দেখা দেবে সংকট। এটি কাটাতে হলে আমদানি বাড়াতে হবে।
পুরানলক্ষ্মীপুর গ্রামের খামারিরা বলছেন,ব্যবসা টেকানো যাচ্ছে না। প্রাণিসম্পদ দপ্তর ঋণও দিচ্ছে না। ব্যাংকে ঋণও পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকের নিয়মে আটকা পড়ে আছি আমরা।
মুরগির খামারে কাজ করা করিম বলেন,খামার মালিকরা খামারে কাজ করা শ্রমিকদের বিদায় করে দিয়েছেন। এতে আমরা কর্মহীন হয়েপড়েছি।
জানা গেছে, ২০২১ সালে সাদুল্লাপুরে মুরগির খামার ছিল ৪৮২টি। তবে করোনাকালে দু'বছরে বন্ধ হয়েছে ১৯২টি। সরকারি প্রণোদনা হিসেবে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু পেয়েছে মাত্র ৯৫টি খামার। ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত করে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এ সামান্য অনুদান পেয়েও কিছু করতে পারেননি খামারিরা। ফলে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই।
উপজেলা মুরগি খামার মালিক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম জানান, তিনি নিজের খামারই বন্ধ রেখেছেন। কারণ,বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগ
নেই। উৎপাদন খরচ উঠছে না খামারিদের।
পোলট্রির ব্যবসার সাথে জড়িতরা বলছেন, ২০২১ সালে এক দিন বয়সী একটি মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ২০ টাকা। বর্তমানে সে বাচ্চা ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার ফিড প্রতি কেজি এখন ৭৮ টাকা। ২০২১ সালে ছিল ৪৬ টাকা কেজি। এ জন্য অন্য ব্যবসায় ঝুঁকছেন খামারিরা।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানায়,প্রকল্প,ছাগল,ভেড়া ও হাঁস-মুরগি পালনের জন্য সর্বশেষ ২০১০ সালে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। এই দপ্তর থেকে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। ১৬৭ খামারি এ ঋণ সুবিধা পেয়েছেন। ঋণের ৭ লাখ ৮ হাজার ৩৫ টাকা আদায় হয়েছে। ঋণ বিতরণ বন্ধের কারণ জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহেল কাফী বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলে আবার ঋণ বিতরণ শুরু হবে।
এদিকে উপজেলায় প্রতিবছর গরুর দুধের চাহিদা ২২ হাজার টন। কিন্তু ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া গেছে এক হাজার ৮৩৩ টন। দুধ প্রাপ্তির হার ৬৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ৩২ দশমিক ৯৩ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। রমজানে সংকট প্রকট হতে পারে।
মৎস্য বিভাগ থেকে জানা গেছে, উপজেলায় বছরে মাছের চাহিদা ৫ হাজার ৮৫৪ টন। কিন্তু বছরে মাছ উৎপাদন হচ্ছে ৪ হাজার ৫৭৬ টন। মাছের ঘাটতি ১ হাজার ২৭৮ টন। এ জন্য রমজানে মাছের সংকট হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সার্জন আব্দুল্লাহেল কাফী বলেন, এখানকার ৪০ শতাংশ মুরগির খামার এরই মধ্যে বন্ধ হয়েছে। অথচ সামগ্রিক পরিবেশ পোলট্রি ব্যবসার অনুকূলে। মুরগির বাচ্চা, খাদ্য ও ওষুধের দাম সহনীয় না হলে খামারিদের টিকিয়ে রাখা যাবে না। তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available