খুলনা ব্যুরো: খুলনায় মোটরসাইকেল গ্যারেজ মালিক মো. আল আমিন বিশ্বাষ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করে পিবিআই বা গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তের দাবি জানিয়েছে নিহতের পরিবার। ২৬ জুন বুধবার সকালে খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন নিহতের পরিবার।
আর এ বিষয়ে পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা সোনাডাঙ্গা থানার সাব ইন্সপেক্টর ত্রিদীপ কুমার মন্ডল জানান, এজাহার ও প্রাথমিক তদন্ত নিয়ে তিনি কিছু জানেন না। কারণ, এজাহার ও প্রাথমিক তদন্ত হওয়ার পর তিনি মামলার তদন্তভার পেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিহত মো. আল আমিন বিশ্বাষের বোন ফাতেমা খাতুন জানান, তার ভাই মো. আলামিন বিশ্বাষ (২৪) খুলনার কয়রা উপজেলায় মোটরসাইকেল গ্যারেজের মালিক। তার বাবা আব্দুল কালাম বিশ্বাষ সৌদি আরবে কাজ করেন। তার ভাই কয়রার মালীখালী এলাকায় থাকেন। তার স্ত্রী ও দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। গত ১ জুন তিনি সাতক্ষীরাতে গ্যারেজের মালামাল কেনার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। ২ জুন খুলনার সিএন্ডবি কলোনির একটি ছয়তলা বাড়ির নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ সময় ওই ভবনের ছাদ থেকে কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর এলাকার মজিবুর সানার ছেলে রিয়াছাদ (২২) ও সিএন্ডবি কলোনি থেকে টুটপাড়া সরকার পাড়া এলাকার মো. ইব্রাহিমের ছেলে মো. আশিক গাজীকে (১৮) গ্রেফতার করে পুলিশ। ৩ জুন এই ঘটনায় থানায় একটি কাগজে আমার সই নিয়ে পুলিশ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে।
পরে আমি জানতে পারি যে কাগজে আমাদের সই নেওয়া হয়েছে সেটি মামলার এজাহার। কিন্তু আমাদেরকে এজাহার পড়তে দেওয়া হয়নি সই করানোর আগে। পাশাপাশি নিহতের পরিবার হিসেবে আমাদের কোনো বক্তব্যও এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি। আমরা পরে এজাহার দেখে জানতে পারি এই মামলায় শুধুমাত্র গ্রেফতার দুইজনকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা ঘটনস্থলে গিয়ে ও আশপাশের মানুষের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি এই ঘটনায় আরো সন্ত্রাসীরা যুক্ত রয়েছে।
এছাড়াও আমার ভাই ১ জুন তিন লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে মালামাল কেনার জন্য। পথে রিয়াছাদ তার পূর্ব পরিচিত সে তাকে তার বোনের বিয়ের কথা বলে খুলনায় নিয়ে আসে এবং ঘটনাস্থল থেকে রিয়াছাদের নিকট থেকে ৪৫ হাজার টাকা ও আমার ভাইয়ের মোবাইলসহ দুটি মোবাইল উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু এজাহারে এই কথা উল্লেখ নেই। মামলার জব্দ তালিকায় ৪৫ হাজার টাকার স্থলে মাত্র সাড়ে ১২ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।
এছাড়াও তিনি অভিযোগ করেন, মামলার দ্বিতীয় আসামি মো. আশিক গাজীর বয়স ১৮ দেখিয়ে তাকে মামলা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্ত কর্মকর্তাকে ২ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত বার বার ফোন করা হলেও তিনি কোনো যোগাযোগ করেননি। ২৫ জুন সোনাডাঙ্গায় থানায় গিয়ে দেখা করলে তিনি বলেন, তিনি তার মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করেছেন। তিনি আমাদের অভিযোগ নিয়েও কোনো সদ উত্তর দিতে পারেননি। এমত অবস্থায় তারা এই হত্যা মামলাটির এজাহার পরিবর্তন ও মামলা পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআই অথবা পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন, নিহত আল আমিন বিশ্বাষের বাবা আবুল কালাম বিশ্বাষ, ফাতেমা খাতুনের স্বামী তরিকুল ইসলামসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
এ বিষয়ে এস আই ত্রিদীপ কুমার মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এজাহার উনারা দায়ের করেছেন। এজাহার করার সময় আমি ছিলাম না। আমি মামলা রেকর্ড হওয়ার পরে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। অতএব এজাহার আসলে কে করেছে, কীভাবে করেছে আমি সেটা জানি না। এছাড়াও তিনি বলেন, এই ঘটনার শুরুতে আমি ছিলাম না। অতএব প্রাথমিক তদন্তে কি কি জব্দ হয়েছে সেটিও আমি জানি না। আমি যেটি জব্দ হিসেবে তদন্তে এসে পেয়েছি সেটি জব্দ তালিকায় দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমি কিছু দিন আগে বগুড়া থেকে এসে এখানে যোগদান করেছি। এসেই আমি এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। আর তিনি বলেন, পুলিশের মামলার সফটওয়্যারে তার একটি মোবাইল নম্বর ছিলো। যেটি তিনি ব্যক্তিগত কারণে বন্দ রেখেছেন। এ কারণে মামলার কাগজে দেওয়া মোবাইল নম্বরে তাকে পাওয়া যায়নি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available