মিরপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় এক মাসে দুইজন বাউলের আখড়া উচ্ছেদ করেছে দুর্বৃত্তরা। চলতি মাসের ৭ তারিখে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের আহমদপুর গ্রামে বাউল নিশানের আখড়া বাড়ি উচ্ছেদ করে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা। নিশানের চাচাতো ভাইদের সাথে দ্বন্দ্বের জের ধরে নিশানের আখড়া ভেঙে জিকে ক্যানেলে ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা। ঘর ভেঙে গাছ কেটে নিশানকে পুরোপুরি উচ্ছেদ করে ওই সন্ত্রাসী চক্র। নিশান এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা হাবিবুল্লাহ বলেন, সরকারি জায়গায় জিকে (গঙ্গা-কপোতক্ষ) ক্যানালের ওপর পাটকাঠির বেড়ার ওপরে টিনের ছাউনি দিয়ে একটি ঘর বানানো ছিল। সেখানে সাধুরা রাতে আসর বসাতেন।
তবে কুষ্টিয়ার মিরপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আব্দুল খালেক বলেন, নিশান সরকারি জায়গায় ঘর বানিয়ে আখড়া করে ছিলো। স্থানীয়রা যারা ভেঙে দিয়েছে তারা আগের দিন নিশানসহ তার চাচাতো ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলো। ডিবি পুলিশ নিশানকে গ্রেফতার করে।
বাউল নিশান জানায়, তিনি আবাসস্থল থেকে ১ কিলোমিটার দূরে আখড়া বানিয়ে সেখানে সাধুসঙ্গ করতেন। সমাজপতিদের সাথে তার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। দুর্বৃত্তরা রাতের অন্ধকারে তার আখড়া বাড়ি ভেঙে তা জিকে ক্যানেলে ফেলে দেয়। নিশান জানায়, তার আখড়ায় হামলা করার আগে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছিল সেটা তিনি জানতেন না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথও জানান, নিশানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিলো সেটা তার জানা ছিলো না। যেহেতু তিনি ফৌজদারি মামলার আসামি তাই তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছিলো।
এ ঘটনায় নিশান কোনো মামলা বা অভিযোগ করেন নাই বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামে মসজিদে মাইকিং করে স্থানীয় বৃদ্ধা বাউল চায়না বেগমের বাড়িঘর ভাঙচুর করে তাকে উচ্ছেদ করে দেয় স্থানীয় মৌলবাদী চক্র।
ভুক্তভোগী বৃদ্ধা চায়না বেগম লালন অনুসারী গাজির উদ্দিন ফকিরের স্ত্রী। এ ঘটনায় তিনি কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এতে ওই এলাকার সাবেক ইউপি মেম্বার এনামুল হক, মাতবর মোশারফ হোসেন, আনার মণ্ডল ও সাইদুল হাজির নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে বাড়িঘর ভাঙচুর করে অন্তত লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ এনেছেন তিনি।
চায়না বেগম জানান, তার স্বামী ও তিনি লালন অনুসারী। তিনি টাকিমারা গ্রামে নিজের জমির ওপরে আখড়া বানিয়ে বসবাস করে আসছেন। ৮০ বছর বয়স এই বাউল জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পরে আখড়াতে তাকে সমাধিত করা হয়। গত ২৬ জুন বুধবার সকাল ৬টার দিকে তার আখড়া বাড়ি ভেঙে দেন স্থানীয় মৌলবাদী চক্র। সাম্প্রদায়িক ওই গোষ্ঠী শুধু তার বাড়ি ভেঙে থেমে থাকে নাই। গাছপালা কেটে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন করেন।
চায়না বেগম আরো বলেন, চেয়েছিলাম জীবনের শেষ দিনগুলো স্বামীর কবরে মাথা ঠেকিয়ে কাটিয়ে দেব। ভিটেমাটিতে প্রতিদিন জ্বলবে সন্ধ্যাপ্রদীপ। কিন্তু সেই ইচ্ছা পূরণ হলো না। আমার স্বামী মৃত্যুর আগে বলে গেছেন, কোথাও জায়গা না হলে তুমি আমার কবরের পাশেই থাকবা। প্রতিবছর বাতাসার সিন্নি হলেও করবা। তাঁর কথা রাখতেই ঘরখানা তৈয়ার করি।
চায়না বেগমের বোন জামাই সাধু শাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, আমাদের অপরাধটা কী? আমরা সাধু সমাজ কী নিজের জমিতেও আর থাকতে পারব না? আজকে সাধুর ঘর কেনো ভাঙা হলো? সাধু সমাজকে কেনো অপমান করা হলো? আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।
কুষ্টিয়া ভাবনগর শিল্প ও সাহিত্য চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি হবিবর রহমান বিশু বলেন, হঠাৎ করে কুষ্টিয়ায় বাউলদের ওপর হামলা মামলার ঘটনা ঘটছে। যা উদ্বেগজনক।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available