মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের শিবালয় বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই উপজেলায় যমুনা নদীর তীরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। ঝুঁকিতে পড়েছে আরও অন্তত ৮/৯শত পরিবারের ঘরবাড়ি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।
৩০ জুন রোববার উপজেলার তেওতা, গান্দাইল, মালচি, সাতুরিয়া, সমেজঘর তেওতা, আলোকদিয়া চর, শিবালয়, দক্ষিণ শিবালয়, আরিচা ল ঘাট, বোয়ালী, অন্বয়পুর, কুষ্টিয়া, দাসকান্দি, নয়াকান্দি, পাটুরিয়া ফেরিঘাট, মান্ডাখোলা, দেবী নগর কয়েকটি এলাকা ঘুরে ভাঙনের দৃশ্য দেখা গেছে।
তেওতা ইউনিয়নের সমেজঘর তেওতা গ্রামের বাসিন্দা হাজেরা বেগম বলেন, তিন-চার দিনের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ির অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে বাকি অংশ ভেঙে নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, এ পর্যন্ত দায়িত্বশীল কেউ তাদের খবরও নেননি। পরিবার-পরিজন নিয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। কোথাও যাবার কোনো জায়গা নেই।
একই এলাকার মঞ্জুরুল আশঙ্কা করে জানান, নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে কয়েক দিনের মধ্যে কয়েকশ ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, তেওতা ইউনিয়নের প্রায় ২০/২৫টি জায়গায় অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় ভাঙনের কবলে পড়েছে। এসব অবৈধ ড্রেজার বন্ধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতি বছর শত-শত পরিবার বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি, অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
একই এলাকার মো. সাজ্জাদ আলী মৃধা বলেন, তীর ভেঙে যমুনা যেভাবে এগিয়ে আসছে, এতে আশপাশের এলাকার ৮/৯শ’ পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে। নদীতে বিলীন হলে এদের প্রায় সবাই নিঃস্ব হয়ে পড়বেন।
আলোকদিয়া চরাঞ্চলে ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো বেশ কয়েকটি পরিবার ইতোমধ্যে মুজিব কেল্লায় আশ্রয় নিয়েছে। তবে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুজিব কেল্লাটিও নদীভাঙনে বিলীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ওই চরের বাসিন্দা বাবুল হাওলাদারের দাবি, এক সপ্তাহের মধ্যে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি নদীর পেটে গেছে। দ্রুত প্রতিরোধ না করা হলে আসন্ন বর্ষায় ঘরবাড়ি হারাতে হতে পারে তীরের প্রায় দুই হাজার পরিবারের। দ্রুত নদীভাঙন রোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মিঞ্জু মেম্বর।
শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে নদী-তীরবর্তী শত শত মানুষের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায়। এক সপ্তাহ ধরে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। তিনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।
নদীভাঙনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন জানিয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি’।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাইনুদ্দিন জানান, তারা নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে ওপর মহলে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। সেটির অনুমোদন পেলেই কাজ শুরুর আশ্বাস দেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available