স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চেংঠী হাজরাডাঙ্গা ইউনিয়নে খোদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধার জমি দখল করে ঘর নির্মাণ কাজ করার অভিযোগ উঠেছে।
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বুলু মাস্টার তার গ্রাম পুলিশ দিয়ে দিনদুপুরে বাগদহ হরনারায়নীপাড়া এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী মোহম্মদ তৈমুজ আলীর বাড়ির পাশের জমি প্রতিবেশী নুর মোহাম্মদকে দখল করে দেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এমনকি ওই মুক্তিযোদ্ধার থাকার পাকা ঘরটিও ভেঙে দখল করে দেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন বলে জানায় পরিবারটি। দিশেহারা মুক্তিযোদ্ধা গাজী মোহম্মদ তৈমুজ আলী গত ৩০ জুন দেবীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগও করেছেন।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, চেংঠীহাজরাডাঙ্গা ইউনিয়নের বাগদহ হরনারায়নীপাড়া এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী মোহম্মদ তৈমুজ আলীর বাড়ির ঘরসংলগ্ন ৪ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল প্রতিবেশী নুর মোহাম্মদের সাথে। জমিটি তার কেনা সম্পত্তি বলে দাবি করেন তিনি। গত ৩০ জুন চেংঠী হাজরাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বুলু মাস্টার তার গ্রাম পুলিশ দিয়ে ওই জমির গাছপালা কেটে নুর মোহাম্মদকে দখল করে দেন। পরে ওই জমিতে ঘর তোলার কাজ শুরু করেন নুর মোহাম্মদ। ক্ষমতার দাপটে তাদের সাথে পেরে উঠতে পারেনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী মোহম্মদ তৈমুজ আলী বলেন, ‘আমার কেনা সম্পত্তি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদকে দখল করে দিয়েছে। এখন সেখানে তারা পাকা ঘর তুলতেছে। স্বাধীন দেশে জনপ্রতিনিধিদের এমন কর্মকাণ্ড আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। আমার একটা হাত নেই। চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের নেতা। তাদের ক্ষমতার সাথে পেরে উঠতে পারছি না। আমি পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করে এই অন্যায়ের বিচার চেয়েছি।’
মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মাছেমা বেগম বলেন, ‘কেনা ওই সম্পত্তিতে আমাদের গাছপালা ছিলো। চেয়ারম্যান বুলু মাস্টার গ্রাম পুলিশ নিয়ে ওদের কাছে টাকা খেয়ে জবর দখল করে জমিটি নিয়ে ওদের ঘর করার সুযোগ করে দিয়েছে। চেয়ারম্যান আমাদের হুমকির মধ্যে রাখছে। জবর দখল করে তারা আমাদের জমিতে ঘর তুলতেছে। আমরা ন্যায্য বিচার চাই।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি আমার কেনা সম্পত্তিতে ঘর তুলবো কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বাধা দিয়ে আসছিল। আমি চেয়ারম্যানকে অভিযোগ করলে মেম্বার-চেয়ারম্যানরা এসে আমাকে মাপযোগ করে দিয়ে যায়। এখনো আমার জমিতে ওদের ঘর রয়েছে। তার বদলে চেয়ারম্যান আমাকে তাদের বাড়ির পাশের ৮ শতক জমি মেপে দিয়েছে। কিন্তু তারা পরে খুঁটি সব তুলে ফেলেছে। আমার জমিতে আমি ঘর করার জন্য ইট এনে রেখেছি সেগুলোও তারা এসে ভেঙে ফেলেছে।’
চেংঠী হাজরাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বুলু মাস্টার বলেন, ‘আমরা যদি তার জমি দখল করে দিয়ে থাকি তাহলে তাকে মামলা করতে বলেন। আর আপনারা মুক্তিযোদ্ধাকে জমি দখল করে দিয়ে যান। নুর মোহাম্মদের একটি ছেলে বিদেশ থেকে আসছে। সে এখানে বাড়ি করবে। আমরা কাগজপত্র দেখেছি, জমিটি নুর মোহাম্মদের। নিজের জমিতেই সে ঘর তুলতেছে। আমরা জমি দখল করে দেইনি। গ্রামের সবাইকে নিয়ে গ্রাম পুলিশের উপস্থিতিতে জমি মেপে দেয়া হয়েছে।’
দেবীগঞ্জ থানার ওসি সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম বলেন, ‘আমরা ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ পেয়েছি। আমরা আইনগত সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের পুলিশ যখন যায় তখন তারা কাজ বন্ধ রাখে। চলে আসলে আবার শুরু করে। আজও আমরা পুলিশ পাঠিয়েছি।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available