স্টাফ রিপোর্টার, ফরিদপুর: ফরিদপুর শহরের আদর্শ বালিকা স্কুলের যৌন নিপীড়ক প্রধান শিক্ষক জয়নুল আবেদীন টিটন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। ১৪ জুলাই রোববার রাতে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে। বর্তমানে তিনি জেল হাজতে রয়েছেন।
২০১০ সালে বিদ্যালয়টিতে যোগদানের পর থেকে গত ১৪ বছর যাবত ওই স্কুলের ছাত্রীদের যৌন হয়রানি নিপীড়নসহ ছাত্রীদের নানাভাবে ভয় ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন ওই শিক্ষক।
রোববার তার দ্বারা নির্যাতিত ও ভুক্তভোগী বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের ১২ জন ফরিদপুরের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে হাজির হয়ে তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো খুলে বলেন এবং লিখিত অভিযোগ দেন। তারই প্রেক্ষিতে গ্রেফতার করা হয় ওই নারী লোভী প্রধান শিক্ষক টিটনকে।
শহরের আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নুল আবেদীন টিটনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দিয়েছেন দশম শ্রেণির একাধিক ছাত্রী। নিজের ও পরিবারের মানসম্মানের ভয়ে এতদিন তারা মুখ খুলেননি।
রোববার দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একাধিক শিক্ষার্থীকে অবস্থান করতে দেখা যায়।
এর আগে ১১ জুলাই বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবর একটি অভিযোগ দেয় শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকেও।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক হবার পর থেকে গত একযুগের বেশি সময় ধরে বিশেষ করে দশম শ্রেণির ছাত্রীরা টিটনের এমন লালসার শিকার হয়েছে। শ্রেণিকক্ষেই ছাত্রীদের গায়ে হাত দিতেন তিনি। নিজ বাসাই প্রাইভেট কোচিং করানোর সময় শিক্ষার্থীদের একাকী পেলে ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়া, ফেসবুক মেসেঞ্জারে উত্তেজনাপূর্ণ আলাপচারিতাসহ পর্ন ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে বশে আনতেন তিনি। ফাঁদে পড়ে তার সঙ্গে অনেক ছাত্রী ঘনিষ্ঠ হতে বাধ্য হয়েছেন। যারা তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতো তাদের টেস্ট পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের উত্তর দিয়ে পাশ করিয়ে দিতো এবং যারা তার কুপ্রস্তাবে রাজি হত না তাদের ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখানো হত।
শিক্ষার্থীরা জানান, শ্রেণিকক্ষে থাকা বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা, বিশেষ করে গত ১১ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই করা হলে অনেক কিছুই জানা যাবে। ক্লাস চলাকালীন মেয়েদের শরীরে স্পর্শ করতেন প্রধান শিক্ষক। এ বিষয়টি অন্যান্য শিক্ষককে জানালেও তারা ভয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহাতাব আলী মেথু জানান, ১৩ জুলাই শনিবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমার সঙ্গে দেখা করলে আমি তাকে এ বিষয় নিয়ে আজকে (রোববার) মিটিং ডাকার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বিদ্যালয়ে আসেননি এবং মিটিংয়ের বিষয়ে কাউকে কলও করেনি। মিটিং কেন ডাকেনি এ বিষয়ে আজ প্রধানশিক্ষককে ফোন দিলে রিং বাজলেও তিনি ফোন ধরেননি। এর আগে আমি ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র থাকা অবস্থায়ও এ ধরনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আমি ডাক যোগে পেয়েছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগকারী না থাকায় তাকে মৌখিকভাবে সাবধান হবার নির্দেশ দেই।
ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটি এবং ফরিদপুর জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি প্রফেসর শ্রিপ্রা রায় জানান, এ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। অনতিবিলম্বে তাকে বরখাস্ত করা হোক। এটা নিয়ে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিব আমরা। ভুক্তভোগীদের পাশে আমরা আছি।
ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার ওসি মো. হাসানুজ্জামান জানান, ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোববার রাতে জয়নুল আবেদিনকে ফরিদপুর শহর থেকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available