বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটের সড়ক-মহাসড়কে শাপলা ফুলের স্টিকার দিয়ে চলছে অবৈধ যানবাহন। পুলিশের সামনে দিয়ে শাপলা ফুলের স্টিকার সাঁটানো এসব অবৈধ গাড়ি বেপরোয়া গতিতে চালালেও পুলিশ না দেখার ভান করে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। ফলে সড়কে এসব অবৈধ যানবাহনের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, সড়কে ঝড়ছে প্রাণ। গত ছয় মাসে বাগেরহাটের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ৩৬ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
সড়ক-মহাসড়কে এসব অবৈধ যানবাহন চলাচল না করলে দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে মনে করেন, স্থানীয় বাস মালিক সমিতি ও বাস চালক নেতৃবৃন্দ।
কাটাখালি ও মোল্লাহাট হাইওয়ে থানার তথ্য মতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত, ৬ মাসে সড়ক মহাসড়কে ৪৯টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে শিশু-বৃদ্ধসহ ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৪ জুলাই রোববার বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে খুলনা-ঢাকা মহাসড়কের নওয়াপাড়া শহীদ স্মৃতি কলেজের সামনে কাটাখালী হাইওয়ে পুলিশ সড়কে ডিউটি পালন করা অবস্থায় শাপলাফুল স্টিকার সাঁটানো অবৈধ মাহেন্দ্র দেখলেও না দেখার ভান করেন।
মহাসড়কের কাটাখালী মোড়ের মাহিন্দ্র স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটা মাহিন্দ্রায় একটি করে শাপলা ফুলের স্টিকার সাঁটানো আছে। এই স্টিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ করা না শর্তে এক মাহিন্দ্রা চালক বলেন, ‘গাড়িতে এই স্টিকার থাকলে পুলিশ ধরে না। প্রতিমাসে স্টিকার বাবদ ৫০০ টাকা দিয়ে থাকি। কাটাখালির মোড়ে মাহিন্দ্রা স্ট্যান্ডের সাইফুল ইসলাম রাজ এবং ফকিরহাট মাহিন্দ্রা স্ট্যান্ডে আলম মোল্লা নামে এই দুজন মাসিক টাকা কালেকশন করে পুলিশসহ সবাইকে ম্যানেজ করে। প্রতিমাসে টাকা দিয়েই আমরা গাড়ি চালাচ্ছি।’
মাহিন্দ্রার সিরিয়াল সমন্বয়কারী বক্কর বলেন, ‘আমি এখানে সিরিয়াল মেইন্টেন করি। গাড়ি প্রতি ৫/১০ টাকা আমাকে দেয়। আর স্টিকারের টাকা রাজ ভাই আদায় করে। আর ফকিরহাটের মাথায় আলম মোল্লাও টাকা আদায় করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই স্টিকার থাকলে পুলিশ গাড়ি ধরে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাহিন্দ্র চালক বলেন, ‘প্রতিটা মাহিন্দ্র গাড়িতে শাপলা ফুলের স্টিকার লাগানো আছে। রাজকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। তা নাহলে পুলিশ আমাদের গাড়ি চালাতে দেয় না। যে সব গাড়িতে স্টিকার লাগানো আছে সেসব গাড়ি হাইওয়ে পুলিশ ধরে না আর এসব চাঁদার টাকা আদায় করে মো. তরিক শেখের ছেলে সাইফুল ইসলাম রাজ।’
এদিকে বাগেরহাট-খুলনা রুটের বাস চালক সাগর বলেন, বাগেরহাট-খুলনা, খুলনা-গোপালগঞ্জ মহাসড়কে যে দুর্ঘটনা হচ্ছে তার অধিকাংশ মাহিন্দ্র, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন এসব অবৈধ গাড়ির কারণে।’
বাস চালক বাবু বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ি, তার একমাত্র কারণ অবৈধ থ্রি-হুইলার গাড়ি। এসব গাড়ি মহাসড়কে উঠতে নাদিলে সড়কে দুর্ঘটনা থাকবে না।’
বাগেরহাট আন্তঃজেলা বাস, মিনিবাস ও মাইক্রবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ এ বাকী তালুকদার বলেন, ‘বাগেরহাট সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তার একমাত্র থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যানবাহন মহাসড়কে চলাচল কারার জন্য।’
বাগেরহাটের কাটাখালী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার থানা এলাকায় কখনোই মাহিন্দ্র, ইজি বাইক চলাচল করতে দিই না। আমাদের সামনে পড়লে সেগুলিকে আটক করি।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজ নামে এক ছেলে কাটাখালির মোড় এলাকায় ঘোরাঘুরি করে। আমার পিছন পিছন অনেক ঘুরেছে, আমি তাকে পাত্তা দিই নাই।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available