রংপুর ব্যুরো: রংপুরে কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর থেকেই আরো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যার পর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ভিসির বাসভবনে থাকা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে ও পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে রংপুরে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পরে ক্যাম্পাসে র্যাবের একটি টিম প্রবেশ করে ভিসিকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে গেছেন বলে র্যাবের অধিনায়ক কামরুল হাসান বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
চলমান কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে মঙ্গলবার ১৬ জুলাই দুপুর থেকেই রংপুরের কারমাইকেল কলেজ, মেডিকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী, জেলা স্কুল, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মুখরিত ছিল রংপুর মহানগরীসহ আশপাশের এলাকা।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে হাজার হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হতে থাকে। মিছিলে তারা স্লোগান দিতে থাকে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ ‘কোটা না মেধা, মেধা-মেধা’ সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান।
পরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে জড়ো হয়, সেখানে গেটের সামনে মাঝখানে অবস্থান নেয় পুলিশ গেটের ভিতরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। স্লোগান দেওয়ার সময় শুরুতে ইটপাটকেল নিক্ষেপের পরে পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে।
সে সময় শিক্ষার্থীদের মাইক হতে শব্দ আসছিলো পুলিশ প্রতি আপনারা আমরা ভাই আপনাদের সাথে আমাদের কিছু নাই, আপনারা দয়া করে টিয়ারশেল, গুলি, লাঠিচার্জ করবেন না। টিয়ারশেলের কারণে শিক্ষার্থীরা পার্কের মোড়, মডার্ন মোড়, সালামের মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সংবাদ পুলিশ-সাংবাদিক-শিক্ষার্থীসহ প্রায় আড়াই শতাধিক আহত হয়। রাত ৯টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের দখলে রয়েছে ক্যাম্পাসসহ রাজপথ।
পরে রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট ১২ তম ব্যাচের আবু সাইদ নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আবু সাইদ রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। নিউজ লেখা পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে। তবে ১৫ থেকে ২০ জন সাংবাদিক মার খেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনেকের ক্যামেরা এবং মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি আমাদের আন্দোলনে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে পুলিশসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগ। আমরা কোন দেশে বসবাস করছি। যেখানে সততার কোনো অবস্থান নাই, যৌক্তিক দাবির কোনো অবস্থান নেই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি কিন্তু সেখানে জোট বাঁধা। এতো হামলা কেনো এর জবাব কে দিবে।
এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে জানতে চাইলে তারা তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য বা মুখ খুলতে রাজি হননি। পরে বিকেল ৫টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবু সাইদের মরদেহ মেডিকেল থেকে হেঁটে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে নিয়ে আসে, সেখানে রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ বাঁধা প্রদান করছে বলে অভিযোগ করেন তারা। পরবর্তীতে জেলা পুলিশ লাইনের সামনে পুলিশ মরদেহ তার হেফাজতে নেয়।
সন্ধ্যার পরে ক্যাম্পাসের ভিতর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করে ছাত্রলীগকে খুঁজতে থাকে। এ সময় ছাত্রলীগের ছেলেরা দেয়াল টপকে ও পাইপ বেয়ে নেমে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। সন্ধ্যার পরে দেখা যায় জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজ আন্দোলনকারীদের পক্ষে একটি মিছিল নিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে চলে যায়।
রাত ৯টা পর্যন্ত দেখা গেছে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভিতর ও রাজ পথে অবস্থান নিয়ে আছেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available