বাবুল আকতার, খুলনা থেকে: খুলনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার সকালে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীনের সভাপতিত্বে তাঁর সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। সভার শুরুতেই ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গণহত্যার শিকার সকল শহীদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি খুলনা সিটি কর্পোরেশন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক তাঁর বক্তব্যের শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন। তিনি আরও স্মরণ করেন ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গণহত্যার শিকার সকল শহীদদের। তিনি বলেন, জাতির পিতার আন্দোলন সংগ্রামের কারণে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন।
আব্দুল খালেক বলেন, বাঙ্গালি জাতিকে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। এটি ছিলো একটি প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেওয়ার এক নারকীয় পরিকল্পনা। কিন্তু বাঙ্গালি জাতির সৌভাগ্য যে বঙ্গবন্ধু সেই শোষণ ও অত্যাচার থেকে বাঙ্গালি জাতিকে মুক্ত করেছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকে সংরক্ষণের ব্যাপারে জোর দেন এবং এ বিষয়ে আরও প্রচেষ্ঠা চালানো হবে বলে মত প্রকাশ করেন।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরি, কেএমপির পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভূঞা, খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ আতিকুর রহমান মিয়া, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবির, সরদার মাহাবুবার রহমান প্রমূখ। সভায় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান অতিথি দাকোপ উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সম্বলিত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৭১ এর আত্মকথন’ বই এর মোড়ক উন্মোচন করেন।
এদিকে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় শোকাবহ পরিবেশে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। সকাল সাড়ে দশটায় চারুকলা স্কুলের ড্রইং এন্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিনের আয়োজনে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে ২৫ শে মার্চের গণহত্যা ও নির্যাতন বিষয়ক স্থাপনা শিল্পের উপস্থাপনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
তিনি বলেন, একাত্তরের ২৫মার্চ রাতে ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে দখলদার হানাদার বাহিনী নির্বিচারে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অপারেশন সার্চ লাইট নামে পরিকল্পিত যে গণহত্যা চালায়, তা পৃথিবীর ইতিহাসে ঘৃণিত হত্যাকাণ্ড। এ রাতে পঁচিশ হাজারেরও বেশি মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। আমরা নৃশংস গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং অপরাধীদের আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একাত্তরের বধ্যভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা সবসময় সেই স্মৃতি ও আবেগ ধারণ করি এবং শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা স্কুলের ড্রইং এন্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিন একাত্তরের ২৫ মার্চ গণহত্যা স্মরণে নতুন প্রজন্মের মধ্যে চেতনা সৃষ্টিতে স্থাপনাশিল্পের যে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে তার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা। সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিন প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রাকিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদযাপন কমিটির আহবায়ক শিক্ষা স্কুলের ডিন প্রফেসর মোছাঃ তাছলিমা খাতুন, কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ রুবেল আনছার, চারুকলা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. নিহার রঞ্জন সিংহ, সামাজিক বিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ খান, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মোঃ শরীফ হাসান লিমনসহ বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত এ গণহত্যা ও নির্যাতন শিল্পস্থাপনায় ১০ মিনিটে একাত্তরের ২৫মার্চ রাতে গণহত্যার প্রতীকী চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা এ উপস্থাপনায় অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে ক্যাম্পাসের মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য অদম্য বাংলার সম্মুখে ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের সহোযোগিতায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের ২০ ব্যাচের শিক্ষর্থীদের আয়োজিত দু’দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। দু’দিনব্যাপী এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
এ সময় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ডিনবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্র বিষয়ক পরিচালকসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রদর্শনীতে একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে দখলদার হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের আলোকচিত্র ও বিভিন্ন প্রমাণ্য চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে সকাল ১০টা থেকে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। রাতে রয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় নিষ্প্রদীপকরণ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available