ফিরোজ হোসাইন, নবাবগঞ্জ: সম্প্রতি সময়ে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার মান ও চিকিৎসকদের দায়িত্ব অবহেলা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোনচা সৃষ্টি হয়েছে। গত সপ্তাহে উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পানিকাউর এলাকা থেকে বিষধর সাপে কামড় দেয় মহানন্দ মন্ডলকে। তাৎক্ষণিক রাত ১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে দায়িত্বরত চিকিৎসক সহকারী সার্জন ডা. নাসিফ আনোয়ার সাপে কামড়ের ভ্যাকসিন না দিয়ে তাকে ঢাকায় প্রেরণ করেন।
সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এই ঘটনার বর্ণনা। এরপর থেকে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার মান ও চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালন নিয়ে নানা সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর ওই চিকিৎসক এবং সহকারীর কাছে কৈয়ফত চেয়ে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয়া হয়। শুধু এই ঘটনাই নয়, এই হাসপাতালে সেবার মান নিয়ে রোগীদের নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
চিকিৎসকদের পাশাপাশি এখানে কর্মরত নার্সদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন রোগীর স্বজন অভিযোগ করে বলেন, নার্সদের কাছে ভর্তি রোগীদের বিষয়ে কোনো কিছু জানতে ও পরামর্শ চাইতে গেলে তারা তেমন কোনো গুরুত্ব দেয় না। অথচ, সরকারি তাদের বেতন-ভাতা দিচ্ছে মানুষের সেবায় কাজ করার জন্য।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রোগী দেখবেন চিকিৎসকরা। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে বেশিরভাগ চিকিৎসককে নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে পাওয়া যায়নি। কেউ আসেন সকাল সাড়ে ৯টায় থেকে ১০টার মধ্যে আবার কেউ সাড়ে ১০টায় কক্ষে প্রবেশ করেন। আবার দুপুর ১টা বাজার সাথে সাথেই কক্ষ থেকে চলে যান চিকিৎসকরা।
রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, সকালে এসে ডাক্তার দেখানোর পর কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিলে সেগুলো রিপোর্ট পেতে সময় লেগে যায়। দুপুর ১টা বা দেড়টার দিকে রিপোর্ট পেয়ে হাসপাতালে আসলে কক্ষে ডাক্তারকে পাওয়া যায় না। না পেয়ে ঘুরে যেতে হয় দূর-দূরান্ত থেকে আগত রোগীদের। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ভোগান্তি। এসব বিষয়ে সংস্লিষ্ট স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও সংস্লিষ্ট দফতরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
চলতি মাসের শুরুর দিকে কুকুরে কামড় দেওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন বক্সনগর দিঘীরপাড় খালপাড় এলাকার বাসিন্দা সুমন নামের এক ব্যক্তি। ওই সময় দায়িত্বরত চিকিৎসকের কাছে রোগীটি আসার পর তিনি রোগীকে জানান, ভ্যাকসিন যে আলমিরায় রাখা হয়েছে সেই আলমিরায় তালা দেয়া।
হাসপাতালে ইয়াসিন আরাফাত নামের একজন ইউনানী চিকিৎসক আছেন। তিনি ইউনানী চিকিৎসা সেবা ও ইউনানী ঔষুধ না লিখে ব্যথাসহ বিভিন্ন এলোপ্যাথিক ঔষধ লিখে প্রেসকিপশন করে থাকেন। এসব বিষয় নিয়ে এর আগেও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তাকে শোকজ দিয়ে দুইবার সতর্ক করা হয়। কিন্তু আবারও সেই আগেরমতই এলোপ্যাথিক ঔষধ লিখে প্রেসকিপশন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে এই ইউনানী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
জরুরি বিভাগে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসে চিকিৎসা সেবা নিতে। সেখানে কোনো রোগীর সেলাই, ড্রেসিং করানোর পর বকশিসের নামে টাকা দাবি করেন কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারীরা। এমনকি সেলাই করা ও জখম স্থানে ব্যান্ডিস করতে গেলে প্রয়োজনীয় তুলাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নেই বলে রোগীদের জানানো হয়। ফলে বাইরে থেকে কিনে এনে দিতে বাধ্য হয় রোগীরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের টিকিট মূল্য তিন টাকা নির্ধারিত হলেও নেওয়া হচ্ছে পাঁচ টাকা করে। এছাড়া ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌড়ঝাপ তো আছেই। বার বার বলার পরও ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা প্রতিদিন সকাল থেকেই হাসপাতালে প্রবেশ করে থাকেন। তারা এতটাই বেপরোয়া যে, বারবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিষেধ করলেও হাসপাতালে প্রবেশ করেন তারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শহিদুল ইসলাম এশিয়ান টিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এখানে নিয়ম হলো, সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ডাক্তাররা কক্ষে থেকে চিকিৎসা সেবা দেবেন। ৮টার পর আসলে বেতনের একদিনের টাকা পাবেন না বলে বেশ কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে। সাড়ে ৯টা বা ১০টায় ডাক্তারদের আসার কোনো সুযোগ নেই এবং ১টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে কক্ষ ছেড়ে চলে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউনানী চিকিৎসক ইয়াসিন আরাফাতকে আগেও কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে। সম্প্রতি আবারও তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা হবে।’
ডা. শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘জরুরি বিভাগের অনিয়মের বিষয়গুলো নিয়ে বেশ কয়েকবার তাদের সতর্ক করে চিঠি দিয়েছি। তবে, নার্সরা আগের চেয়ে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available