কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: ‘আমার আশা ভরসা স্বপ্ন সব শেষ, আমি এখন নিঃস্ব’ কথাগুলো বলছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী মারুফ হোসেনের মা ময়না খাতুন।
গত ১৯ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রামপুরা এলাকায় গুলিতে নিহত হন তিনি। ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহটি গত রোববার খোকসা পৌর এলাকার থানা পাড়ার পৌর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
মারুফের পিট দিয়ে ঢুকে পেট ছিন্নভিন্ন হয়ে গুলি বেড়িয়ে গেছে।
মারুফের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার থানা পাড়া এলাকায়। মারুফের বাবা শরিফুল ইসলাম ফুটপাতে পেয়ারা বিক্রি করে কোনমতে সংসার চালান। এই অভাব অনটনের সংসারে মারুফকে কুষ্টিয়া সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পড়াশোনা করিয়েছেন। এবছরই কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে গত ১ জুলাই ঢাকায় ইন্টার্নি করতে গিয়েছিলে মারুফ। ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে বাবার সাথে মুঠোফোনে শেষ কথা হয় মারুফের। বাবাকে বলেছিল, একটু পরিবেশ-পরিস্থিতি ভালো হলে গাড়ি চলবে। গাড়ি যেদিন ছাড়বে আমি সেদিনই চলে আসবো। ছেলে ঠিকই বাড়ি আসলো কিন্তু লাশ হয়ে।
এমনটিই জানাচ্ছিলেন মারুফের হতভাগ্য পিতা শরিফুল ইসলাম।
ওইদিন বিকেলেই মারুফ হোসেন গুলিতে নিহত হন।
দুই ভাই-বোনের মধ্যে মারুফ বড়, ছোট বোন মায়সা খাতুন (১০) চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।
মারুফের মা ময়না খাতুন জানান, ‘আমার সোনার টুকরো ছেলে। কোনদিন কারো মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেনি। এলাকার প্রতিটি মানুষ কলিজার টুকরোকে ভালবাসত। মাত্র দুই শতাংশ জমির উপর আমার একটা ঘর। ছেলে আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল ইন্টার্ন শেষ করে চাকরি করে বাড়ির সামনে ফুফুর জমি কিনে বড় বাড়ি করে দিবো। আমার সব স্বপ্ন শেষ, আমি এখন নিঃস্ব, আমার মারুফ এখন শুধুই স্মৃতি, আর কোনো আশাও নাই ভরসাও নাই। বিচার চেয়ে কী করবো, যে যাওয়ার সে তো চলেই গেছে।’
মারুফের ছোট বোন মায়সা বলেন, ‘আমার ভাইকে যারা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে, তাদের বিচার চাই। ভাই ছাড়া তো আমি একা হয়ে গেলাম। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম।’
মারুফের প্রতিবেশী খোকসা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমরান হোসেন বলেন, ‘মারুফের মতো ভদ্র ছেলে পুরো খোকসায় দ্বিতীয়টি নেই। কোনদিন কারো সাথে বিবাদ করতে দেখি নাই, কোনদিন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। নিজের পড়াশোনা ছাড়া ওকে কোনদিন কোনো আজেবাজে ছেলেদের সাথে মেলামেশা করতেও দেখিনি। গত ২৮ জুন বাড়ি থেকে ঢাকায় যায় ইন্টার্ন করতে গিয়েছিল। ঘটনার দিন সে যে মেসে থাকতো সেটা ছিল ৬তলা, নিচে নেমিছিল ওর প্রয়োজনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সামনের রাস্তায় আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে বিজিবির করা গুলিতে মারুফ ঘটনা স্থলেই নিহত হয়। এমনটাই জানিয়েছেন মরদেহ বহন করে নিয়ে আসা সহপাঠী ও স্বজনরা।’
খোকসা থানার অফিসার ইনচার্জ আন-নুর যায়েদ জানান, ‘নিহতের স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available