নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে সামাজিক অস্থিরতা ও আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলছে। ২৮ জুলাই নবীনগর সদরে একই পরিবারের চারজন ফাঁসিতে ঝুলে মারা যাওয়ার একদিন যেতে না যেতেই ৩০ জুলাই মঙ্গলবার মা-মেয়ে ঋণের চাপে পড়ে কেড়ির বড়ি খেয়ে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ও কাঠালিয়া গ্রামে। পুলিশ দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে রাতেই নবীনগর থানায় নিয়ে আসে।
জানা যায়, নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার মজিবুর রহমানের স্ত্রী নূরতারা বেগম (৫৫) বিভিন্ন সমিতি থেকে ক্ষুদ্রঋণ তুলেছিলেন এবং তার মেয়ে কাঠালিয়া গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী সবুজ মিয়ার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার (২৬) এর কাছ থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার এনেছিলেন। মেয়ের টাকা-স্বর্ণালংকার দিতে না পারা ও সমিতির কিস্তির চাপে পড়ে মা-মেয়ে পরামর্শ করে তারা দু'জন কেড়ির বড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করার। পরামর্শ মোতাবেক মঙ্গলবার দুপুরে নাতনির হাত দিয়ে কাঠালিয়া গ্রামে মেয়ের কাছে কেড়ির বড়ি পাঠিয়ে দেয় নূরতারা বেগম। ওইদিনই দুপুরে প্রথমে মা কেড়ির বড়ি খেয়ে মেয়েকে ফোনে জানালে মেয়েও কেড়ির বড়ি খেয়ে ফেলে। পরিবারের লোকজন মুমূর্ষ অবস্থায় তাদের নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ডাক্তার মা-মেয়েকে ওয়াস করে কুমিল্লায় রেফার করেন। কুমিল্লা নেওয়ার পথে দুজনেই মারা যান। এদের মধ্যে মেয়ে সোনিয়া আক্তার অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন এবং তার আরও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।
সোনিয়া আক্তারের মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাত বলেন, ‘সকালে আম্মা আমাকে বলেছে, তোর নানি রাস্তায় আসবে, তোকে এক হাজার টাকা দিতে এবং সাথে একটা ব্যাগ দেবে, কেউ যেন জানতে না পারে। আমি নানির কাছ থেকে টাকা ও ব্যাগ নিয়ে আসি। বাসায় যেতেই আম্মা আমার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে নেয়। আমার ছোট বোন কান্না শুরু করে মজা খাওয়ার জন্য, বোনকে সাথে দিয়ে আম্মা আমাকে দোকানে পাঠিয়ে দেয়। মজা কিনে বাসায় গিয়ে দেখি আম্মা দরজা বন্ধ করে আছে। আমি ডাকাডাকি করলেও দরজা না খোলায় আমি চিৎকার শুরু করি। তখন সবাই এসে দরজা ভাঙ্গে, তখন আম্মা বমি করছিলো। পরে বাড়ির লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
নূরতারা বেগমের ছেলের বউ লিজা বেগম জানান, ‘তার শাশুড়ী দুপুরে বাইরে থেকে ঘরে এসে শুয়ে পরে এবং বিদেশে দুই ছেলের সাথে ফোনে কথা বলার কিছুক্ষণ পর বমি করতে থাকে। পরে বাড়ির লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
মজিবুর রহমান বলেন, ‘সকালে আমি কৃষি কাজে চলে গিয়েছিলাম। কাজ থেকে বিকেলে বাড়িতে আসার পথে জানতে পারি, আমার স্ত্রী ও মেয়ে কেড়ির বড়ি খাইছে। এই খবর শুনে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সমিতি ও মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকার মতো ঋণ ছিলো আমাদের পরিবারের। আমার দুই ছেলে বিদেশ রয়েছে, তারা তো টাকা পাঠাচ্ছে। তারপরও আমার মেয়ে ও স্ত্রীকে কেন মরতে হবে, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’
নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ১০টায় পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠিয়েছে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available