রংপুর ব্যুরো: কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়’র (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কলেজ ছাত্র আলফি শাহরিয়ার মাহিমের (১৬) জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
১ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশু আদালত-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল শুনানি শেষে ১০০ টাকার বন্ডে এ জামিন আদেশ দেন।
এ ব্যপারে মাহিমের আইনজীবী জোবায়দুল ইসলাম বলেন, মামলাটি মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় ছিল। আগামী ৪ আগস্ট শুনানির দিন ছিল। কিন্তু আমরা আজ নতুন করে শুনানির জন্য আবেদন করেছি। আদালত তা গ্রহণ করে শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেছেন।
কিন্তু জামিনে বেরুলেও আতঙ্ক কাটেনি মাহিমসহ তার পরিবারের। তারা ভয়ে বেশি কথা বলতে চাচ্ছেন না। কারণ, মাহিমকে আটক করার পরেও নানা নাটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আবারও বেশি কিছু বললে প্রশাসনের লোকজন যদি কোনো ক্ষতি করে বা তুলে নিয়ে যায়, এ কারণে নিশ্চুপ হয়ে থাকছেন তারা।
জানা যায়, বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গত ১৯ জুলাই মাহিমকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে মাহিমের গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি এতদিন সকলের অগোচরেই ছিল।
উল্লেখ্য, মাহিমের বাবা মোহাম্মদ শাহজালাল চকবাজার এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। গত বছর সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে মাহিম। সে বর্তমানে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ৩১ জুলাই বুধবার ভাইয়ের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় মাহিমের বোন সানজানা আখতার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
সানজানা আখতার স্ট্যাটাসে লেখেন, গত ১৮ জুলাই তার ভাই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলে জানতে পারে পরীক্ষা স্থগিত। তখন বন্ধুদের সাথে মিছিলের মাঝে জড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশের টিয়ারশেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা ১৮ তারিখ আনুমানিক বিকেল ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারি, তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে। সেখানকার স্থানীয় লোকজন কোনো এক হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।
রাত ১০টা পর্যন্ত সব হসপিটাল-ক্লিনিক খুঁজেও যখন পাচ্ছিলাম না, তখন বাবার কাছে একটা কল আসে। তারা জানায়, ‘আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে। জানাজানি করবেন না। তাতে ছেলের ক্ষতি হবে। তাকে আগামীকাল (১৯ জুলাই) সকালে ছেড়ে দেয়া হবে। চিন্তার কিছু নেই।’ কিন্তু, পরের দিন ১৯ জুলাই সকালে আমরা খোঁজ নিলে তারা অস্বীকার করে বলে, তাদের কাছে এই নামে কেউ নেই। এরপর আনুমানিক বিকেল সাড়ে চারটায় কোর্ট থেকে কল আসে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা কোর্ট থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম, তাকে (আলফি) আবু সাইদ ভাইয়ের হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সেদিন থেকে বার বার কারাগারের দরজা থেকে ফিরে এসেছি। একটাবার দেখা তো দূর; তার কণ্ঠও শুনতে দেয়নি কেউ। মেট্রোপলিটন কোর্ট তার মামলা কিছুতেই শিশু আদালতে (জুভেনাইল কোর্ট) দিতে চায়নি। অনেক চেষ্টা করে গত ৩০ জুলাই শিশু কোর্টে নেওয়া হলে ডেট দেয় আগামী ৪ আগস্ট। ৪ তারিখ কি রায় দেবে আমার জানা নেই। তবে আমি আমার ভাইকে ফিরে পেতে চাই। বেকসুর খালাস দেওয়া হোক, এটা চাই।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available