সিলেট প্রতিনিধি: সরকার পতনের একদফা দাবিতে রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি পালনে সিলেটে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রোববার বেলা ১২টার কিছু আগে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে থাকে এসময় পুলিশ বাধা প্রদান করলে পুলিশ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
তখন শিক্ষার্থীরা বন্দরবাজার, জিন্দাবাজারসহ আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয় এবং পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল মারতে শুরু করে। পুলিশ-আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে। আন্দোলনকারীদের ইটপাটকেলের জবাবে পুলিশ গুলি, রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে।
এই সময়ে জিন্দাবাজার এলাকায় পেট্টোল পাম্পের সামনে এক কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে পুলিশের সাথে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রসহ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। এসময় আন্দোলনকারীরা খানিকটা পিছু হটেন। এরপর পরই আন্দোলকারীরা তাদেরকে পাল্টা ধাওয়া দিলে পিছু হটে পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, সকাল থেকেই নগরীর চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, বারুতখানা, সোবহানীঘাট, নয়া সড়ক, উপশহর, মদিনা মার্কেট, টিলাগড়সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে শিশুসহ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশের গুলিতে এক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এমন পরিস্থিতিতে শহরজুড়ে চাপা আতঙ্ক দেখা দেয়। আতঙ্কে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পার্শ্ববর্তী দোকানপাট ও মার্কেট বন্ধ এবং রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ অবস্থান নেয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র অবস্থান নিতে দেখা গেছে। বেলা ১টা থেকে নগরীর জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, বারুতখানা, জেলরোড, হাওয়াপাড়া, মিরবক্সটুলা, নয়াসড়ক ও আম্বরখানাসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেয়।
সড়ক ব্যারিকেড দিয়ে তারা যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পুলিশ দেখামাত্র তারা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেয়। পাশাপাশি কিনবিজ্রের দক্ষিণ পাশ ভার্থখলা এলাকায় আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে রাথেন। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে আবার আন্দোলনকারীরা একই স্থানে অবস্থান নেয়।
এদিকে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র অবস্থান নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এসএমপির মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, আন্দোলনকারীরা কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করছিল। এসময় পুলিশ তাদেরকে রাস্তা ছেড়ে যেতে বললে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্র ভঙ্গ করে দেয়।
এদিকে জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলায় গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত তিনজন হলেন- ধারাবহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩), উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা কয়ছর আহমদের ছেলে সানি আহমদ (১৮) ও মিছিন গ্রামের নাজমুল ইসলাম(৩৫)। এ তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাহিন আহমদ।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, দুপুরে গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে ছাত্র-জনতা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় তাদের সরিয়ে দিতে চায় পুলিশ। এসময় সেখানে বিজিবিও উপস্থিত ছিলো। এক পর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে ছাত্র-জনতার তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। বিভিন্ন মসজিদে ঘোষণা দিয়ে এসময় এলাকাবাসীও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ছাত্র-জনতা ও এলাকাবাসী পুলিশ-বিজিবির দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে এবং পুলিশ-বিজিবি গুলি, টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকে।
এক পর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবি পিছু হটতে বাধ্য হয়। সংঘর্ষ গোলাপগঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বেলা ২টার দিকে পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে কিছু মানুষ জড়ো হলে সেখানে পুলিশ ও বিজিবি আসলে উত্তেজনা দেখা দেয়। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে বিদ্ধ হয়ে তাজ উদ্দিন ও সানি আহমদ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা পরে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, তাজ উদ্দিনের মরদেহ নিয়ে পৌরশহরে এসে ধারাবহর এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। গোলাপগঞ্জ পৌরশহর ও ঢাকাদক্ষিণ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available