মেহেরপুর প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনীতে বাড়ছে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। আর এতে দিন দিন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের মাঝে। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য মতে জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত উপজেলায় ৪৫৮ জন অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়ে অনেকে সুস্থ হয়েছেন এবং অনেকে এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্থানীয় সচেতন মহলের কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, এলাকায় অসুস্থ গবাদি পশু জবাই করে বিক্রয় করা হয়। এছাড়াও অনেকে আবার গোপনে মাংস ব্যবসায়ীদের কাছে জবাই করে কম দামে বিক্রয় করে দেয়। অসুস্থ গবাদি পশুর মাংস খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসন এ ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অসুস্থ গবাদি পশু আর কেউ বিক্রয় করতে পারবে না।
উপজেলার করমদি গ্রামের সুজন আলী বলেন, আমার স্ত্রী অসুস্থ ছাগলের মাংস নাড়াচাড়া করেছিল। এরপর তার গলায় হালকা চুলকাতে লাগে পরে সেখানে ঘা হয়ে যায়। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তারা বলে অ্যানথ্রাক্স হয়েছে। বর্তমান আমার স্ত্রী গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়ে এখন আল্লাহর রহমতে অনেকটাই ভালো আছে।
উপজেলার দেবীপুর গ্রামের মো. আশরাফ আলী বলেন, আমি গত মাসের ২৩ তারিখে আমার এক আত্মীয়র গরু অসুস্থ হলে জবাই করে আমি সেই মাংস হাত দিয়ে নাড়াচাড়া এবং কেটেছিলাম। পরে আমার হাতে একটি ছোট্ট ফোড়ার মত হয় এবং সেখানে চুলকাতে থাকে পরে সেই জায়গায় আস্তে আস্তে ফুলতে থাকে। তারপর অবস্থা বেগতিক দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ গিয়ে জানতে পারি অ্যানথ্রাক্স হয়েছে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সূত্র জানায়, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মেহেরপুর গাংনী উপজেলায় ৪৫৮ জন অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এটা যারা আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন তাদের হিসাব। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অ্যানথ্রাক্স এর রোগী রয়েছে যারা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার (ভাঃ প্রা) ডা. মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুমে এই রোগটা বেশি দেখা যায়। পানি জমে থাকা মাঠের ঘাস খেয়ে গবাদি পশু এ রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়াও আক্রান্ত মাছ থেকেও অ্যানথ্রাক্স রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স রোগ কমানোর জন্য টিকা প্রদান করা হচ্ছে।
এব্যাপারে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সুপ্রভা রানী বলেন, বিভিন্ন গ্রাম থেকে আশা অ্যানথাক্স রোগীরা আমাদের এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসা নিয়ে অনেকে সুস্থ হয়েছেন। এখনো অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মাঠকর্মীদের রোগী শনাক্ত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সবাইকে অসুস্থ পশুর মাংস না খাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা বলেন, যারা অসুস্থ পশু জবাই করে বিক্রয় করে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আর অসুস্থ পশুর মাংস বিক্রয় না করার জন্য গবাদি পশুর মালিককেও সচেতন হতে হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available