বাগেরহাটে প্রতিনিধি: বাগেরহাটে থামছে না ঘের দখল, গরু-মটরসাইকেল কেড়ে নেওয়ার ঘটনা। অভিযোগ দিলেও পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। পুলিশের কাছে অভিযোগ দেয়ায় উল্টো বাড়ি ছাড়া হয়েছে এলাকার কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবারের পুরুষরা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার বিঞ্চুপুর ইউনিয়নের মান্দ্রা ও চিতলমারী উপজেলার নাসির পুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের বুক ফাটা কান্না। এলাকার বিএনপি নেতা নওশের হাওলাদারের তিন পুত্র রনি, জনি (শ্রমিকলীগের কর্মী) ও রানার অত্যাচারে মুখ খুলতে পারছে না তারা।
এ বিষয়ে মান্দ্রা গ্রামের জয়নাল ঘরামির কন্যা খায়রুন আক্তার বলেন, ‘আমার পিতা দিন মজুরের কাজ করতো। আমি গার্মেন্টে চাকরি করে বাবাকে একটি গুরু কিনে দিয়েছিলাম। সেই গরু থেকে ৫টি গরু হয়েছে। গত ৬ আগষ্ঠ রাত ৮টার দিকে আমাদের এলাকার নওশের হাওলাদারের ছেলে রনি, জনি ও রানা দলবল নিয়ে আমাদের বাড়ি এসে গোয়ালঘর থেকে ৫টি গরু নিয়ে যায়। এসময় আমার বৃদ্ধ মা বাধা দিলে তাকে মারধর করে। আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। বাগেরহাট থানায় অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’
মান্দ্রা গ্রামের মনসুর শেখের কন্যা স্বামী পরিত্যাক্ত লিমা আক্তার বলেন, ‘আমার পিতা ও দুই ভাই ৫ আগষ্ট থেকে বাড়ি ছাড়া। আমরাও পাশের আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। গত ৬ আগস্ট এলাকার নওশের হাওলাদারের ছেলে যুবলীগ নেতা জনি হাওলাদারের নেতৃত্বে রনি, রানা, নাজমুল, রেজা, রফিকসহ আরও কয়েকজন দরজা ভেঙ্গে আমাদের ঘরে ঢুকে বড় ভাইয়ের মটরসাইকেল, আমার শেলাই মেশিন ও প্রায় ৭০ হাজার টাকার সিটকাপড় নিয়ে যায়। এ সময় জনি আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেয়। এ বিষয় কাউকে কিছু বলতে পারছি না। মুখ বুঝে কান্না করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।’
লিমা আরও বলেন, ‘ছোট ভাইয়ের এফজেট মটরসাইকেল পাশের বাড়িতে রাখা ছিল। ৭ আগস্ট জনি এসে সেটাও নিয়ে গেছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
এদিকে চিতলমারী উপজেলার নাছির পুর গ্রামের ঝড়ু গোলদার বলেন, ‘৫ আগস্ট রাত ৮টারদিকে দেশি অস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে নওশের হাওলাদারের ছেলে রানা হাওলাদার, জনি হাওলাদার, রনি হাওলাদারের নেতৃত্বে সিরাজ হাওলাদার, মোবারেক হাওলাদার, রেজা শেখ, আনো হাওলাদার, মিজান শেখ, মিলন ফকির আমার ছোট ভাই হরে কৃঞ্চর গোয়ালে থাকা গরু নিয়া যায়। ভয়ে আমার ৫টি গরু চিতলমারীর রায় গ্রামে আমার জামাতা শুকুমার হীরার বাড়িতে রেখে আসি। ওই লুটকারীরা সেখান থেকেই ৬ আগষ্ট আমার ৫টি গরু নিয়া আসে। এছাড়া তারা আমার ঘের থেকে প্রায় ২ লক্ষ টাকার মাছ ধরে নিয়ে গেছে। আমি এ বিষয়ে চিতলমারী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ‘বিঞ্চুপুর ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি সুমন হাওলাদারের সাথে থেকে গত আওয়ামী লীগের আমলে নওশের হাওলাদারের ছেলে জনি হাওলাদার এলাকার সাধারণ সমানুষ ও জামায়াত বিএনপির উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। আর এখন যুবদলের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে। এদের তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম আ্যান্ড অপস মো. রাসেলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে বাগেরহাট সদর, চিতলমারী ও মোড়েলগঞ্জের কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। আমরা সকল তথ্যই সংশ্লিষ্ট ওসিদের দিয়েছি। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছি। পুলিশ কোনো দখল, বেদখল বা অবৈধ দখল কোনভাবেই বরদাশত করবে না।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available