মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন: ভয়াবহ ও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জের সার কারখানাসহ বিভিন্ন ফেক্টরি থেকে নির্গত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ শীতলক্ষ্যা নদী হয়ে দিনের পর দিন মেঘনায় মিশছে। দেখা যাচ্ছে, গত কয়েকদিন ধরে মেঘনা নদীর পানি বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। পানি দূষণের ফলে ছোট প্রজাতির মাছ মারা যাচ্ছে। এতে করে মতলবের জীববৈচিত্র ও মৎস্য সম্পদে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। মেঘনা নদীর মতলব উত্তর অংশে থাকা মাছ এবং মাছের পোনা মরে যাচ্ছে কিছুদিন ধরে। পচা মাছের দুর্গন্ধে সয়লাব মেঘনা নদীর তীর। যে কারণে নদী তীরবর্তী সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন কাজও করতে পারছে না ।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে প্রায় কয়েক টন দেশি চেউয়া মাছ ও বিভিন্ন জাতের পোনা মাছসহ ছোট জাতের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে গেছে। স্থানীয় মৎস্য বিভাগের দাবি, আশপাশের শিল্পকারখানাগুলো নদীর পানিতে বর্জ্য ফেলছে। স্থানীয় লোকজন হাটবাজার ও বাসাবাড়ির আবর্জনাও নদীতে ফেলছেন। ফলে নদীর পানি দূষিত হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর পাশের ষাটনল ইউনিয়নের জেলেপাড়া, বাবু বাজার, সটাকী, বাহাদুরপুর এলাকায় পানিতে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এখানে পানি নষ্ট হয়ে কালো রং ধারণ করেছে। চোখে পড়ে ফেনাযুক্ত পানি। পানিতে মরা মাছ ভাসতেও দেখা যায়।
জেলেদের প্রতিনিধি ফুলচান বর্মন জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের কারখানার পরিত্যক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কলকারখানার দূষিত কেমিক্যালযুক্ত পানি মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে আসায় ছোট-বড় মাছ মরে ভেসে উঠছে। পচা মাছের দুর্গন্ধে নদী পাড়ের মানুষের জীবনমান দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলার নদীর পানি এখানে প্রবেশ করেছে। এক সপ্তাহ ধরে নদীর পানির রং বদলে যাচ্ছে। শহরের বিভিন্ন কারখানার দূষিত বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে পানি দূষিত হয়ে রং পরিবর্তন করেছে। দূষিত পানির কারণে পানির পিএইচ ও অ্যামোনিয়া মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রায় শূন্য হয়ে যাওয়ায় নদীতে থাকা বিভিন্ন জাতের বড় মাছ, মাছের পোনা ও জলজ প্রাণি মরে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে নদীর ষাটনল এলাকায় কয়েক টন মাছ মরে গেছে। মাছগুলো মরে ভেসে গেছে এবং নদীর পাড়ে জমাট হয়ে পচে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
মতলব উত্তর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম জানান, মাছ মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হবে। বর্জ্যের কারণে নদীর পানিতে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মাছ মরে ভেসে ওঠে।
তিনি বলেন, খবর পাওয়ার পর পরই সহকারী মৎস্য কর্মকর্তাকে নদীর অবস্থা দেখতে পাঠানো হয়েছে। পানিতে মিশে থাকা দূষিত পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ২৯মার্চ বুধবার পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, কিছুক্ষণ আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি জানিয়েছেন। আগামী ২ এপ্রিল রোববার সরেজমিনে পরিদর্শন করে পানির নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available