রাঙামাটি প্রতিনিধি: সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ হতে নিজেই অব্যাহতি নিলেন অংসুই প্রু চৌধুরি। ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো নিজের স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি চেয়ারম্যান পদ ছাড়ার বিষয়টি জানান। বিষয়টি নিয়ে খবর নিলে অব্যাহতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরি।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই রাঙামাটি জেলা পরিষদ পুনর্গঠন নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্য দিয়ে বৈষম্য বিরোধী সরকারের পক্ষ থেকে নতুন চেয়ারম্যান-সদস্যদের নাম আসার আগেই কাউখালী উপজেলার বাসিন্দা রাঙামাটি আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত অংসুই প্রু চৌধুরি অবশেষে নিজে থেকে পদত্যাগ করেছেন। খুবই শীঘ্রই রাঙামাটি জেলা পরিষদে নতুন পর্ষদের নামের প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে, প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অংসুই প্রু চৌধুরি উল্লেখ করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা ও আমার প্রিয় নেতা দীপংকর তালুকদারের আমার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন হিসেবে ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ সালে নিয়োগ পেয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার গ্রহণ করি। দায়িত্ব গ্রহণের পর হতে আমি চেয়ারম্যান হিসাবে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি দল, মত, সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্ব থেকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলাকে একটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, পরিবেশ, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন ও পর্যটন উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধন করে একটি সমৃদ্ধ ও সম্প্রীতির জেলা হিসেবে রূপান্তর করতে। সকল সেক্টরে উন্নয়ন ও সম্প্রীতির রাঙামাটি গড়ার লক্ষ্যে দীপংকর তালুকদারের নেতৃত্বে ও সহযোগিতায় বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কর্মসূচি ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু বিরাজমান পরিস্থিতির মধ্যে সময় ও সুযোগ না থাকার কারণে সেগুলোর শতভাগ প্রতিফলন ঘটানো বা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় নাই। এটাই আমার জীবনের সবচাইতে বড় ব্যর্থতা এবং গ্লানি। এই ব্যর্থতা ও গ্লানিকে সাথে নিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছি।
আমি চেয়েছিলাম রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদকে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক প্রভাবমুক্ত একটি জনমুখী ও জনকল্যাণমূলক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করেছিলাম। কিন্তু সেই লক্ষ্যকে চূড়ান্ত করতে পারি নাই। এইজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক সংঘঠিত ঘটনার প্রেক্ষাপটে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বাস্তবায়নে পার্বত্য জেলা পরিষদ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলেও বিভিন্ন সরকার ও ব্যক্তিদের কারণে এই প্রতিষ্ঠানকে একটি দলীয় পুনর্বাসন কেন্দ্র, স্বেচ্ছাচারী, অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাধারণ জনগণের মধ্যে এই নেতিবাচক বার্তা পৌঁছেছে, যেটা পার্বত্যবাসীর জন্য দুঃখজনক এবং আমার জন্য অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর ছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে তিনি আরও বলেন, আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক রাস্তা, ব্রিজ,অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা, নারী উন্নয়নসহ পরিবেশ ও পর্যটন উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
পরিশেষে, আমার দায়িত্বকালীন আমার পরিষদের সকল সদস্য, পরিষদে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী, লাইন ডিপার্টমেন্টের সকল বিভাগ/দপ্তর প্রধান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, সাংবাদিক, আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতৃবৃন্দসহ দীপংকর তালুকদারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
দায়িত্ব পালনকালীন সকল সফলতা রাঙামাটি পার্বত্যবাসীর সকল ব্যর্থতা নিজ কাঁধে নিয়ে বিশেষ কারণে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করছি। সকলে ভালো থাকবেন। আপনাদের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব এই আমার প্রত্যাশা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available