নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি: পিরোজপুরের নেছারাবাদে গ্রাহকদের আনুমানিক ৭০ কোটি টাকার সঞ্চয় নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে কুড়িয়ানা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় লিমিটেডের পরিচালক সঞ্জীব মণ্ডলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় শতাধিক গ্রাহক সঞ্জীবের তালাবদ্ধ বাড়িতে জড়ো হয়ে অবস্থান নেন। সেখানে তারা আমানত ফিরে পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা ও সমিতির বিভিন্ন গ্রাহকরা জানান, অতি মুনাফার ফাঁদে পড়ে সমাজের ভিক্ষুক শ্রেণি থেকে শুরু করে স্কুলকলেজের শিক্ষক, বিধবা নারী, গৃহিণী-সহ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ এই সমিতির সদস্য হয়েছেন। সমিতিতে এককালীন, মাসিক, সাপ্তাহিক আকারে দ্বিগুণ মুনাফা, মাসিক মুনাফার প্রত্যাশায় কষ্টার্জিত টাকা জমা রাখেন।
সমিতির শুরু থেকে গ্রাহকদের কিছু মুনাফা দিয়ে সমিতির প্রতি মানুষের আকৃষ্ট করা হয়। তাঁরা সমিতির শুরুর দিকে গচ্ছিত আমানতে কিছু মুনাফা দিয়ে এখন মূল আমানত নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন পরিচালক সঞ্জিব মণ্ডল। গ্রাহকদের দাবি, কুড়িয়ানা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় লিমিটেডে প্রায় ৭০ কোটি টাকার আমানত ছিল।
সমিতির গ্রাহকেরা আরও জানান, ২০১৭ সালের ১৫ জুন উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের কুড়িয়ানা বাজারে গণপতিকাঠি গ্রামের সঞ্জীব মণ্ডল গড়ে তোলেন কুড়িয়ানা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় লিমিটেড। সমিতিতে পুরো ইউনিয়নসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অতি মুনাফা দেখিয়ে সদস্য সংগ্রহ করা হয়।
ইউনিয়নের আদাবাড়ী গ্রামের আরতি হালদার (৫০)। স্বামী মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। ঘরে একটি মাত্র প্রতিবন্ধী মেয়ে। মেয়ের নামের প্রতিবন্ধী ভাতাসহ আরতি জমানো টাকা রাখেন ওই সমিতিতে। সমিতির প্রথম থেকে তাঁকে মুনাফা দিয়েছে। মুনাফার টাকায় চলত তাঁদের সংসার। এখন আরতীর প্রতিবন্ধী মেয়ের ভাতার টাকাসহ জমানো পুরো টাকা নিয়ে উধাও সঞ্জীব মণ্ডল। আরতি কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার ঘরে খাবার-দাবার কিছু নেই। চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। হাট-বাজার করতে পারি না। আমি এখন কীভাবে বাঁচব।
একই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক নিত্যনন্দন সমদ্দার অবসরের ৩১ লাখ টাকা সঞ্জীবের সমিতিতে জমা রাখেন। প্রথম কিছু মুনাফা দেওয়া শুরু করে সমিতি। এতে সমিতির ওপর বিশ্বাস স্থাপন হয় তাঁর। পরে একই সমিতিতে আরও ১ লাখ টাকার ডিপিএস করেন তিনি। এখন তাঁর মূলধন নিয়ে লাপাত্তা সঞ্জীব মণ্ডল। নিত্যনন্দন সমদ্দার বলেন, ‘আমি এখন নিঃস্ব। পথের ফকির।
সরেজমিনে জানা গেছে, কুড়িয়ানা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় লিমিটেড ছাড়াও আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের কুড়িয়ানা, আদমকাঠি, ধলহার, আতা গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন নামে বহুমুখী সমবায় সমিতি। এসব সমিতি একই ভবনে একাধিক অথবা সড়কের পাশে চাকচিক্য ভবনে পরিচালনা করা হচ্ছে। সমিতির পরিচালকেরা হাজার হাজার গ্রাহকের আমানত নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন। প্রবাসী থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী, বিধবা গৃহিণীসহ অনেকে সারা জীবনের কষ্টার্জিত অর্থের পুরোটাই সমিতিতে জমা রেখেছিলেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. হাসান রকি বলেন, আমি গত মাসে এখানে এসেছি। জানতে পারলাম এখানকার সমিতিগুলো খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। এ বিষয়ে আগের কর্মকর্তা ভালো জানেন। এতো খারাপ বুঝলে আমি এখানে আসতাম না। সমিতিগুলোর মালিকদের ডেকে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available