স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর: বন বিভাগের বাধায় গাজীপুরের শ্রীপুর বনাঞ্চলে শ্রীপুর কলেজ রোড় হইতে পেলাইদ নদীর ঘাট পর্যন্ত সড়কের সংস্কার (কার্পেটিং) কাজ বন্ধ রয়েছে। সড়কের সংস্কার কাজের অনুমতির দাবিতে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী ছাত্র সমাজ ও পাঁচ গ্রামের শতাধিক মানুষ। ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী শ্রীপুর-গোসিঙ্গা সড়কের ওই সড়কের সংযোগস্থলে ভুক্তভোগী ছাত্র সমাজ ও গ্রামবাসীর ব্যানারে তারা মানববন্ধন করে। পরে তারা শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেয়।
তবে বন বিভাগের দাবি, ওই সড়কে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি রয়েছে। তাই সড়কে কাজ করতে গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। তবে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের দাবি ওই সড়কের জমি সরকারিভাবে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সোহেল মৃধা বলেন, হঠাৎ করেই শ্রীপুর কলেজ রোড় থেকে পেলাইদ নদীর ঘাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং কাজে বন বিভাগ বাধা দিচ্ছেন। তাই তাঁরা নির্মাণকাজ চালাতে পারছেন।
অংশগ্রহণকারীরা জানান, শতবর্ষী পুরনো সড়কটি প্রথমে মাটি ফেলে ও পরবর্তীতে ইটের সলিং করে উন্নয়ন করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি কার্পেটিংয়ের জন্য সরকারিভাবে দরপত্রের মাধ্যমে সংস্কারকাজ শুরুর আড়াই মাস পর বন বিভাগের লোকজন কিছু অংশে বাধা দিচ্ছে। অথচ সড়কটি শতবর্ষী পুরনো।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা কফিল উদ্দিন জানান, এ সড়কটি গাজিয়ারণ, তাতিসুতা, নতুন পটকা, নয়াপাড়া, পেলাইদসহ আশপাশের গ্রামের প্রায় ১০-১৫ হাজার জনগণের একমাত্র চলাচলের রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৪ বছর যাবত এ সড়কে ইটের সলিং থাকা অবস্থায় ব্যবহারের উপযোগী ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারি হতে সড়কটির কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
গ্রামবাসী জানান, আমাদের পূর্ব পুরুষেরা এ সড়ক দিয়ে চলাফেরা করেছে। আমরাও চলাফেরা করছি। হাজারও দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে গাজীয়াড়ন, নতুন পটকা, পেলাইদ, পাঁচুলটিয়া, তাঁতীসুতাসহ সাতটি গ্রামের মানুষ সড়ক দিয়ে চলাফেরা করেছে। ইট বিছানো সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার পর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বন বিভাগের বাধার কারণে বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে সড়কটি কার্পেটিং করার উদ্যোগ নিয়ে দরপত্রের মাধ্যমে কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কমপক্ষে ৫’শ শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত এবং এলাকার কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য কষ্ট করে বাজারে নিতে হচ্ছে। দুই মাসের বেশি সময় যাবত সংস্কারকাজ করা হলেও বর্তমানে কাজ বন্ধ থাকায় এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ পত্তনদার বলেন, বন বিভাগ বাধা দেওয়ার পর সড়কের কার্পেটিংয়ের বিষয়ে উপজেলা রেজুলেশন হয়। পরবর্তীতে ওই রেজুলেশন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। সেখান থেকে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো আসে নাই। শ্রীপুর কলেজ রোড় থেকে পেলাইদ নদীর ঘাট পর্যন্ত রাস্তাটি উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে দরপত্র আহ্বান করা হয়। যথারীতি ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। রাস্তাটির ওপর ইতোমধ্যে ৯টি কালভার্ট স্থাপন করা হয়েছে।
শ্রীপুর ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, এটি বন বিভাগের সংরক্ষিত এলাকা। যে সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে ওই সড়কে সংরক্ষিত বন বিভাগের জমি রয়েছে। তাই তারা তাদের জায়গা দিয়ে সড়কের কার্পেটিং করতে দেবে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এই সড়কের কাজে বাধা দিয়ে যাবেন তাঁরা। বর্তমানে সড়কে কার্পেটিং উন্নীতকরণের কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। যত দ্রুত সম্ভব কার্পেটিং কাজ শুরু করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন আমরা সে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available