মোজাহিদ সরকার, ইটনা (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপি রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রাখতে সভাপতির-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার ফলে অষ্টগ্রামে নেই দলীয় কোনও কর্মসূচি। এ কারণে উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ ও হতাশা। নিষ্ক্রিয় তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম। সরকার বিরোধী আন্দোলনে দলকে চাঙ্গা করতে সংগঠন ঢেলে সাজানোর দাবি তৃণমূল বিএনপির।
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপি গত ১১বছরে উপজেলা ও ইউনিয়নে কোনও সভা- সমাবেশ অথবা কর্মীসভা আয়োজন এবং দলীয় কর্মসূচি পালন করেনি। ২১ফেরুয়ারী, ২৬ মার্চ, ১৬ডিসেম্বরের মত রাষ্ট্রীয় দিবসও পালন করতে দেখা যায়নি। দেড় বছর আগে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন হাওরের পাশে এক নেতার উঠানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউনিয়ন, ওয়ার্ড বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপজেলা সভাপতির বাসায় ডেকে এনে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে অষ্টগ্রামে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কমিটি গঠনে যোগ্য নেতৃত্বের চেয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয় অর্থশালী ও আনুগত্যতা নেতৃত্বকে। অষ্টগ্রামের জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী নেতাদের এড়িয়ে গোপনে গঠন করা হয় বিভিন্ন কমিটি।
এই বিষয়ে বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রবীণ নেতা মো. ধন মিয়া (মেম্বার) বলেন, যে মুরুব্বিরা বিএনপির ভোটমেকার ছিল, তাদের বাদ দিয়ে উঠতি ছেলে-পেলে দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। তাদের দেখে এখন বিএনপি বলে নিজেকে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শক্তিশালী নেতৃত্বের অভাবে গত ১১বছরে কোনও দলীয় কার্যক্রম পালিত হয়নি। উপজেলা বিএনপি সভাপতি সৈয়দ সাঈদ আহমেদে তার গৃহকেন্দ্রিক রাজনীতি চর্চার কারণে দিন দিন নিষ্ক্রিয় হচ্ছে অষ্টগ্রাম বিএনপি। সম্প্রতিক কেন্দ্রীয় বিএনপি ঘোষিত 'ইউনিয়ন পদযাত্রা' উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মুকুল ও সদর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি মো. দানা মেম্বারের নেতৃত্বে পালিত হয়। এসময় আওয়ামী লীগের সাথে উস্কানীমূলক আচণে ধাওয়া খেয়ে পালায় তারা।
এই ঘটনায় ৬৯জন নেতাকর্মী মামলার আসামি হন। ৩০ মার্চ কিশোরগঞ্জ জজ কোর্টে হাজির হলে উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ ছয় জনকে জামিন না-মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায় আদালত। ৫ এপ্রিল চার জনের জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্ট। উপজেলা বিএনপির সভাপতির সাধারণ সম্পাদকের আনুগত্য না হওয়ায় জামিন আবেদন করেনি দুই যুবদল নেতার।
মাঝেমধ্যে সভাপতি সৈয়দ সাঈদ আহমেদ তার মহল্লার বাজারে ১০-১৫ মিনিট ফটোসেশন করে ১-২টি দলীয় কর্মসূচি পালিত হয় । তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি আপলোড করে কর্মসূচি শেষ করেন তিনি। ৭নভেম্বর জিয়াউর রহমানের জন্মদিন, শাহাদাৎ বার্ষিকী, বেগম জিয়ার জন্মদিন পালিত হয়, সৈয়দ সাঈদ আহমেদের ঘরে। পরে সেই ছবি আপলোড করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সাধারণ মানুষের নিকট বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তৃণমূল বিএনপি নেতা-কর্মীরা হতাশ। তারা জানান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবদায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, জনদুর্ভোগ লাঘবে বর্তমান সরকারের পতন আন্দোলন গতিশীল করতে অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপি ঢেলে সাজানো দরকার। তরুণ ও ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপির নয়া কমিটি গঠন করতে হবে।
এই বিষয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা ছাত্রনেতা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের কেন্দ্রীয় নেতা তানভীর আহমেদ তামান্না বলেন, দুঃখজনক ১১বছরের মধ্যে অষ্টগ্রামে বিএনপি কোনও কর্মসূচি পালন করেনি। তাদের কাজ দলের পদ নিয়ে বাণিজ্য করা। সারাদেশের মত অষ্টগ্রাম বিএনপিকে ঢেলে সাজানো সময়ের দাবি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ঘরে বসে রাজনীতি করে সরকার পতন হবে না।
অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বর্তমান বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জিএম মোশারফ উদ্দিন হালিম বলেন, পকেট কমিটি সম্পাদক পদের পরিচয় দেয় না। দেড় বছরেও একটি 'পরিচিত সভা' আয়োজন করতে পারেনি যারা, তাদের দিয়ে এই 'স্বৈরাচারী সরকার' পতন আন্দোলন হবে না। তরুণ সাহসী ও জনপ্রিয় নেতাদের সমন্বয়ে নয়া নেতৃত্ব চাই।
সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদলনেতা ও উপজেলা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং অষ্টগ্রাম সদর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু বলেন, লাগামহীন দ্রব্যমূল্য, বাকস্বাধীনতা হরণ, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র এখন নির্বাসনে। আপোষহীন বিশ্বনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানকে মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে আনা, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে, সকল বিভেদ ভুলে তৃণমূল বিএনপিকে ঐক্য বদ্ধ করে জনগণকে নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মুকুল। তিনি বলেন, আমরা সবসময়ই আমাদের দলীয় কার্যক্রম সক্রিয় রয়েছি। বিএনপি অষ্টগ্রামে সবসময়ই শক্তিশালী ঘাঁটি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু দালাল রয়েছে যারা বিএনপি করে আবার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। মূলত এইসব দালাল চক্র বলে বেড়াচ্ছে বিএনপি অষ্টগ্রামে নিষ্ক্রিয়। আওয়ামী লীগের সুযোগ-সুবিধায় উনারা মেম্বার হয়, চেয়ারম্যান হয় এবং বিএনপিতে তারা একটা গ্ৰুপ তৈরি করতে চাই আওয়ামী লীগ মনোবিশিষ্ট। আমরা অষ্টগ্রাম বিএনপি ২৪ ঘন্টা সক্রিয় রয়েছি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available