তানভীর আহাম্মেদ, দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ বড় শীতলাই গ্রামের চুল কেটে মুখে চুনকালি দিয়ে স্কুলছাত্রী কিশোরীকে পৈচাশিক নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় অবশেষ থানায় মামলা হয়েছে। এজাহার নামীয় কুলসুম ও দেলজান নামের অভিযুক্ত ২ নারী গ্রেফতার হলেও ঘটনার মুলহোতা ম্যাডাম খ্যাত শারমিন মাহবুব পলাতক রয়েছে ।
জানা যায়, শীতলাই গ্রামে সুশিক্ষিত ঐ মহিলা হতদরিদ্র জনগনের স্বাস্থ্য সেবা, আশ্রয়হীনদের স্থানীয়ভাবে পুনর্বাসন, শিক্ষা খাতে জনহিতকর কাজ করে আসছেন। তিনি নিজের জমিতে নিজস্ব অর্থায়নে দৃষ্টি নন্দন মায়ের বাড়ি নামকরণে একটি বিলাশ বহুল আবাস স্থাপন করেছেন। সেখানে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মোহসেনা মা ও শিশুসেবা স্বাস্থ্য কেন্দ্র’ চলমান আছে। জনকল্যাণকর বেশ কিছু কাজের মাধ্যমে সেখানে তিনি কতিপয় অভাবী পরিবারের কর্ণধার হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। সেই সুবাদে এলাকার একটি বিশেষ অংশে তিনি ম্যাডাম হিসেবে বহুল পরিচিত।
অভিযোগ উঠেছে, শারমিন মাহবুব সীমিত কয়েকটি উপকার ভোগী পরিবারের হর্তাকর্তা সেজে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নিজেকে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে দাপটের সাথে ভাল কাজের অন্তরালে নানান অপকর্ম বীর দর্পে চালিয়ে গেলেও প্রতিবাদ করার সাহস পায় না বলে জানান বর্তমান ইউপি সদস্য হোসেন আলী ও সাবেক সদস্য মাহাবুব হোসেন চৌধুরী বাবুসহ অসংখ্য জনতার অভিযোগ রয়েছে।
গত ২ এপ্রিল বিকেলে ম্যাডাম শারমিন মাহবুব ও তার কতিপয় সমর্থক দল বেধে প্রতিবেশী দরিদ্র মোস্তাফিজুর রহমান অরুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে, তার কিশোরী স্কুল পড়ুয়া ১৪ (চৌদ্দ) বছরের মেয়েকে দেহ ব্যাবসায়ী ও চোর অপবাদে, আটক করে মারপিট, জোর পুর্বক তার মাথার চুল কেটে, মুখে চুনকালি লাগিয়ে পৈচাশিক নির্যাতন করে। হঠাৎ নির্মম এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় অরুর পরিবারসহ এলাকাবাসী হতভম্ব হয়, বর্বর নির্যাতনের শিকার পরিবারটি কিংকর্তব্য বিমুঢ়, দিশেহারা হয়ে পড়ে।
বে-আইনি, চরম অন্যায়, মানবতা বিবর্জিত অমানুষিক মধ্যযুগীয় কান্ড ঘটিয়ে তিনি ক্ষান্ত হন নি, হুমকি দেওয়া হয়েছে। যদি কোন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে জীবনের তরে শিক্ষা দেওয়া হবে। তার হাত অনেক লম্বা, উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে, দেখে নিবে ইত্যাদি। তাই অরুর পরিবার মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে দুই দিন ভয়ে গৃহবন্দী জীবন যাপন করেন।
পরবর্তীতে বিষয়টি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও মিডিয়ার নজরে আসলে তাদের সহযোগিতায় পুলিশ প্রটেকশনে নির্যাতিত পরিবারটি ঘটনার ২ দিন পর ৫ এপ্রিল বীরগঞ্জ থানায় এসে ভিকটিমের মা শরীফা বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
ঘটনা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার দাবি করেছেন এলাকার সচেতন নাগরিক সমাজ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ ও সকল পেশাজীবীরা।
পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহার নামীয় দুই নারীকে গ্রেফতার করলেও প্রধান অভিযুক্ত পালিয়ে গেছে। স্পর্শকাতর, চাঞ্চল্যকর এই মামলার বাদী, ভিকটিম ও তাদের পরিবারের লোকজনের সাথে রাতেই থানায় এসে কথা বলেছেন ইউনো বীরগঞ্জ ইউএনও বীরগঞ্জ (চলতি দায়িত্ব) রাজকুমার বিশ্বাস।
তিনি তাদেরকে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সুব্রত কুমার সরকারের সাথে কথা হলে তিনি সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, কেউ আইনের উর্ধ্বে নন। অপরাধী যত বড় ক্ষমতাধর হোক না কেন, কোন ছাড় নেই।
মামলা তদন্তকারী অফিসার এসআই আশরাফুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত দুই নারীকে গ্রেফতার করাসহ অন্যান্যদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available