শেরপুর প্রতিনিধি: টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের মহারশি, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর দুই কূল উপচে দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে উপজেলা দুটির গ্রামীণ অধিকাংশ সড়ক ও ফসলের মাঠ। অনেক বাড়িঘর হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। এমন আকস্মিক বন্যায় মহাদুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত ৫০ গ্রামের মানুষ।
জানা গেছে, গত ৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। রাতভর বৃষ্টিতে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর পানি বেড়ে উপজেলার সদর বাজার, উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ চারটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। একই কারণে সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতেও পানি বেড়েছে। ডুবে গেছে নালিতাবাড়ী পৌরসভাসহ তিনটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। ভোগাই নদীর দুই পাড়ের কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে শ্রীবরদী উপজেলায় সোমেশ্বরী নদীর পানিও বাড়ছে। ডুবে গেছে শত শত পুকুর, সবজি ও ধানের ক্ষেত। টানা ভারী বর্ষণের কারণে শেরপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বৃহস্পতিবার থেকেই মহারশি নদীতে পানি বাড়ছিল। গভীর রাতে নদীর কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে যায়। এর পর পানি ঢুকে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। ঝিনাইগাতী বাজার ও রাংটিয়া সড়কের ওপর দিয়ে এবং ভোগাই নদীর ভাঙন অংশ দিয়ে পানি ঢুকে গড়কান্দা ও শিমুলতলী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে প্রবল বেগে ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকছে। ভেঙে গেছে বাড়িঘর। জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ স্থানে ছুটছে মানুষ।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত নালিতাবাড়ীতে ২২৫ মিলিমিটার, নাকুগাঁওয়ে ২৬০ মিলিমিটার ও শেরপুর সদরে ১৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে নালিতাবাড়ীতে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২৫ সেন্টিমিটার ও ভোগাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মহারশির পানি। সোমেশ্বরী, মৃগী নদী ও পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও বেড়েছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, পোড়াগাঁও, রামচন্দ্রকুড়া ও নয়াবিল ইউনিয়নের পাঁচ-ছয়টি গ্রামের কোথাও কোমর ও গলাপানি উঠে পড়েছে। আটকে পড়াদের উদ্ধারে স্পিডবোট ও নৌকা পেতে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ ইউনিয়নের প্রতিটিতে শুকনো খাবার ও পানি বরাদ্দ দিয়েছি। বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ কাজ শুরু হয়েছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ঝিনাইগাতী সদর, ধানশাইল, কাংশা ও নলকুড়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের আংশিক প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পানিবন্দিদের উদ্ধার করার জন্য কাজ করছেন। একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তৈরির জন্য দায়িত্বশীলদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শেরপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের মেরামত কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।
অন্যদিকে, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় টানা ২২ ঘণ্টার বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নেতাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে আমন ধানের ক্ষেত। ডুবেছে রাস্তাঘাট, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিল জানান, পানি কমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available