কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বুক চিড়ে প্রবহমান চিত্রা নদীর অবৈধ দখলদার ও পানি দূষণের কবলে। এ নদীটি চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা নিম্ন স্থান থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ঝিনাইদহে প্রবেশ করেছে।
আর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ হয়ে মাগুরার শালিখা হয়ে নব গঙ্গায় মিশেছে চিত্রা। ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটি কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আছে। কালীগঞ্জ শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা চিত্রা নদী এক সময় দেশীয় প্রজাতির মাছের ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত ছিল।
পাট কাটার পর পাট জাগ দেওয়া, নদীতে ধান চাষ ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং শহরের বিভিন্ন বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে চিত্রা নদীর পানি দূষিত হয়ে দেশীয়
প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্ত প্রায়। এ নদীর পানি ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেচকাজে কৃষকের বড় সহায়।
নদীর অধিকাংশ জায়গার দুই পাড় এখন অবৈধ দখলদারদের দখলে। অনেকে দোকানপাট নির্মাণ করে ব্যবসায়িক কাজ পরিচালনা করছেন। অনেকে বসতবাড়ি নির্মাণ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন।
এ কারণে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ হারিয়ে ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে চলেছে। এক কালের খরস্রোতা চিত্রা নদী এখন মৃত প্রায়। নৌ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক সময়
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট হিসেবে ব্যবহৃত হতো চিত্রা নদী।
লঞ্চ, ছোট স্টিমার, মালবোঝাই নৌকা নিয়মিত চলাচল করত চিত্রা নদীর বুক চিরে। নাব্য সংকটের কারণে এখন আর নৌ চলাচলের কোনো উপায় নেই। চিত্রাকে
ঘিরে নৌযান চলাচলের চিত্র আজ শুধুই অতীত স্মৃতি।
অবৈধ দখলদাররা প্রতিনিয়তই গ্রাস করে চলেছে চিত্রা নদীর দুই পাড়। অব্যাহত দখলের কারণে চিত্রা নদী পরিণত হয়েছে শীর্ণ খালে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই এই উপজেলায় চিত্রা নদীর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এবং সচেতন মহল।
বর্ষা মৌসুমে এ নদীতে কিছু পানি থাকলেও শীতকালে অধিকাংশ জায়গায় জেগে ওঠে চর। আবার নদীর যে অংশে পানি থাকে সেখানকার স্থানীয় লোকেরা নদীতে বাধ দিয়ে রাখেন। ফলে বন্ধ হয়ে যায় পানির প্রবাহ।
তখন সেচের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদীর দুই পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি। নদীর দুই তীরের জমিতে উৎপাদিত পাট চিত্রা নদীতে জাগ দেওয়ার কারণে
পানি পচে নষ্ট হয়ে যায়। যা মাছ উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে।
এ ছাড়া কালীগঞ্জ শহরের সব ড্রেনেজ এবং নদীতীরবর্তী আবাসনগুলোর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চিত্রা নদীর সঙ্গে যুক্ত করায় দূষিত হয় এ নদীর পানি। নদীপাড়ের সাধারণ মানুষ অবিলম্বে এই নদী রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।
সরেজমিনে শহরের চিত্রা নদীর উপর নির্মিত ব্রিজের দুই ধারে দেখা যায়, নদীর মধ্যেই ভবন নির্মাণ করে সেখানে বসবাস ও ব্যবসা-বাণিজ্য করা হচ্ছে। ব্রিজটির ফুটপাত ঘেঁষে নদীর মধ্যে বাঁশের উপর মাচা তৈরি করে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বিক্রি করা হচ্ছে মাংস।
নতুন ব্রিজের নিচে নদীর মাঝখানে পুরাতন ব্রিজের ভঙ্গুর অবশিষ্ট অংশ বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে থাকায় পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আবার হেলাই ব্রিজ সংলগ্ন নদীর মধ্যেই কাটা হয়েছে বড় পুকুর। এই ব্রিজের মুখে নদীতে পানি থাকা অবস্থায় প্রচুর পট জমাট বেঁধে থাকে। যা নদীর স্বাভাবিক পানির প্রবাহকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করে।
কালিগঞ্জের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, লেখক এবং গবেষক এম এ কাদের বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে বার বার আন্দোলন-সংগ্রাম করার পরও কেন চিত্রার অবৈধ
দখলদারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়।
আমি মনে করি, সরকার নিজেই নদী দূষণ করছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশ নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শহর উপশহর। কালিগঞ্জ ও তার ব্যতিক্রম নয়। শহরের সকল ময়লা আবর্জনা এমনকি মোবারকগঞ্জ চিনিকলের আবর্জনা নদীতে ফেলা হয়।
অবস্থা এমন যে বর্তমানে কালীগঞ্জে চিত্রা নদী বড় একটি ডাস্টবিন। তাই কালীগঞ্জের পরিবেশ রক্ষায় যত দ্রুত সম্ভব চিত্রা নদীকে বাঁচাতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম বলেন, চিত্রা নদী রক্ষা করার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো কার্পণ্য থাকবে না। চিত্রা নদীর দুই পাশে অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং নদী দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব শীঘ্রই অভিযান শুরু হবে। চিত্রা নদীকে দখল মুক্ত করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available